অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কথিত সন্ত্রাসী আর জঙ্গি দমনের নামে সরকারের র্যাব-পুলিশ বিগত ৫ বছর ধরে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কয়েকশ নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশে রাজনৈতিক সংকট যখন প্রকট আকার ধারণ করে ঠিক তখনই সরকার কথিত জঙ্গি আস্তানা ও রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ে বোমা আবিষ্কার করে। এভাবে মানুষের দৃষ্টিকে মৌলিক সমস্যা থেকে দূরে রাখার জন্য সরকার নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে।
বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকার বিগত ১০ বছর ধরে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও সরকারের লোকজন বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে জঙ্গিদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পর্ক আছে। জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদেরকে নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দূরবীন দিয়ে খুঁজেও জঙ্গি ও কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পর্ক পায়নি।
জামায়াত-শিবির এদেশের বৈধ ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংগঠন দুইটির নেতাকর্মীদেরকে কোথাও বসাতো দূরের কথা দাঁড়াতেও দিচ্ছে না। এমনকি মসজিদে নামাজরত অবস্থায়ও পুলিশ সদস্যরা জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারা একসঙ্গে বসে কুরআন-হাদীসের আলোচনা করলেও পুলিশ বলে গোপন বৈঠক আর নাশকতার পরিকল্পনা করছে।
এছাড়া বোমা আর ককটেল নাকটতো আছেই। রাস্তা থেকে আটক করে পুলিশ বলছে বোমাসহ আটক করা হয়েছে। মসজিদ থেকে আটক করেও বলা হচ্ছে ককটেলসহ আটক করা হয়েছে। বাসা থেকে আটক করেও বলা হচ্ছে অস্ত্রসহ আটক করা হচ্ছে। এমনকি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে আটকের পরও বলা হয় যে বোমা ও ককটেলসহ আটক করা হয়েছে।
২০১৬ সালের প্রথম দিকে রাজধানীর কাফরুলে একটি বৈঠক থেকে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারসহ ১৫ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দাদন ফকীর একটি অনলাইন গণমাধ্যমে বলেছিলেন- জামায়াতের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে ডিবি অফিসে নেয়া হবে। ওই সময় ওসি বলেননি যে তাদের কাছ থেকে বোমা-ককটেল পাওয়া গেছে। কিছুক্ষণ পর ওই বাড়ির সামনে পুলিশের একটি গাড়ি আসে। গাড়ি থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি লাল কালারের বালতি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেন। আশপাশের অনেকেই দেখেছে যে, বালতির মধ্যে পানিতে ককটেল ছিল।
এরপর, তাদেরকে ডিবি অফিসে নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে বালতি ভর্তি ককটেল এনে হাজির করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারপর গণমাধ্যমকে বললেন যে, এসব ককটেলসহ তাদেরকে আটক করা হয়েছে। এমনভাবেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদেরকে আটক করে পুলিশ বোমা ও ককটেল নাটক সাজাচ্ছে।
তবে, দেশের কোথাও জামায়াত-শিবির কার্যালয়ে বোমা বা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এমন সংবাদ আজ পর্যন্ত কোনো মিডিয়া প্রকাশ করতে পারেনি। কিন্তু, সরকারের পুলিশ বাহিনী আজ সেই কাজটাও করেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শিবিরের কার্যালয়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার সমর্থক টিভি চ্যানেলগুলো সন্ধ্যার পর থেকেই প্রচার করছে। লাইভ সম্প্রচার করে নিউজরুম থেকে বার বার জানতে চাওয়া হচ্ছে শিবিরের কার্যালয়ে কতজন অবস্থান করছেন? পুলিশ কতজনকে আটক করেছে? বোমা কয়টি বিস্ফোরিত হয়েছে আর কয়টি বোমা পাওয়া গেছে? রিপোর্টাররা জানাচ্ছেন-পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। অফিসে কোনো লোক নেই। পরের প্রশ্ন- তারা কীভাবে পালিয়েছে আর লোক না থাকলে বোমা বিস্ফোরণ করছে কে?
আর পুলিশের দাবি, শিবির নেতাকর্মীরা অভিযানের খবর জানতে পেরে তারা ভবনের ছাদে গিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এরপর তারা সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে গেছে।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন সৃষ্টি হয়-যখন পুরো ভবনটি ঘেরাও করে রাখা হয়েছে সেখানে ককটেল ফাটিয়ে তারা পালিয়ে গেল কীভাবে? পুলিশ দেখে যদি তারা পালিয়েও যায় তাহলেতো বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা না। তারাতো চুপি চুপি চলে যাওয়ার কথা।
এছাড়া, পুলিশের কাছে যদি এমন তথ্য থাকে যে শিবির অফিসে বোমা আছে তাহলে দিনের আলোতে না গিয়ে সন্ধ্যার পর অভিযানে গেল কেন? তার উপর পুলিশের নেতৃত্বে ছিলেন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা নগর পুলিশের উপকমিশনার মেহেদি হাসান। যে কিনা এমন অসংখ্য নাটকের কারিগর।
নাম প্রকাশ না করে আশপাশের অনেকেই বলছেন, ওই ভবনের পাশে সাদা পোশাক পরে এসে পুলিশই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। পুলিশ যখন এসেছে তখন শিবির অফিসে কোনো লোক ছিল না। আর থাকলেও এতগুলো পুলিশের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আর অফিসের ভেতর থেকে পুলিশ যে ককটেল ও গান পাউডার পাওয়ার দাবি করছে, সেগুলোও পুলিশ সাথে করে নিয়ে এসেছিলো।