অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
হঠাৎ করেই নতুন মোড় নিচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি! ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রোববার অর্থবহ সংলাপের দাবি জানিয়ে সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছিল। ড. কামাল হোসেনের চিঠির সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে তিনি সংলাপে বসতে রাজি আছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন। এরপর রাতে ঐক্যফ্রন্টের নেতা মোস্তফা মুহসিন মন্টুকে ফোন করে গণভবনে নৈশভোজেরও দাওয়াত দিয়েছেন। জানা গেছে, দুই-তিন দিনের মধ্যে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর থেকেই ড. কামাল হোসেনসহ জোটের নেতাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে আসছেন। সংলাপতো দূরের কতা ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার ১ দফাও মানা হবে না বলে সাফ জানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু, আগামী শুক্রবার ঢাকায় জনসভা ঘোষণা দেয়ার পরই হঠাৎ করে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও এর অন্তরালে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা এনিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সংশয় রয়েছে। আর এই সন্দেহের পেছনে কিছু কারণও রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আওয়ামী লীগ নেতারা হাটু ও কোমর ভাঙা, দলছুট, জনবিচ্ছিন্ন ও গণবিচ্ছিন্ন বলে আখ্যাদিয়ে আসছে। গত তিনদিন আগেও ওবায়দুল কাদের বলেছেন ঐক্যফ্রন্টের ডাকে মানুষ সাড়া দেয়নি। কিন্তু, সিলেট, চট্টগ্রামে দুইটি সফল সমাবেশ করার পর ঐক্যফ্রন্ট যখন ঢাকায় জনসভার ঘোষণা দিল ঠিক তখনই সংলাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট যে কিছু একটা করতে পারবে সরকার সেটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসবে এমন নির্বাচন শেখ হাসিনা দেবেন না। তাই সংলাপে বসলেও ঐক্যফ্রন্টকে সরকার বেশি কিছু ছাড় দেবে না। সর্বশেষ সংলাপের ফলাফল শূন্য হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।
তারা আরও বলছেন, বিরোধী শক্তি যখন শক্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা করে তখনই আওয়ামী লীগ আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে তড়িগড়ি করে সংলাপের আয়োজন করে। যেমন-২০১৩ সালেও বিএনপি-জামায়াত জোট যখন আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল তখনই সরকার সংলাপ নাটক আবিষ্কার করেছিল। এবার সংলাপে বসার সিদ্ধান্তও আগের মতোই হতে পারে। আন্দোলন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দূরে রাখাও সরকারের একটি কৌশল হতে পারে।
সচেতন মানুষ মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন সরকারের মূল উদ্দেশ্য নয়। সংলাপের নামে ছলেবলে কৌশলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখতেই সরকারের সংলাপ নাটক। সরকার বিরোধী জোটকে সংলাপের ফাঁদে ফেলতে চাচ্ছে। কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সংলাপে যাওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না।