অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
‘জাতীয় ঐক্যে’র জন্য বিএনপি তার জোটসঙ্গী জামায়াতকে ছেড়ে দেবে কি না, এমন আলোচনা বেশকিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। অবশেষে জামায়াতকে সঙ্গে রাখা বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলো। যেই বিকল্পধারা জামায়াতের বিরুদ্ধে বেশি শোরগোল তুলেছিলো, সেই বিকল্পধারার বাপ-বেটাকেই অবশেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বাদ দেয়া হলো।
এদিকে এসব কিছুতে মাথা না ঘামিয়ে আগামী নির্বাচনে শতাধিক আসনে ভোটের প্রস্তুতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সবসময়ের আলোচিত দল জামায়াত। তবে জানা গেছে ৫০টির মতো আসনে ছাড় পেতে চেষ্টা করবে দলটি।
আদালতের রায়ে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে এবং তাদের নির্বাচনী প্রতীক দাঁড়িপাল্লাকে ভোটে ব্যবহারেও নিষিদ্ধ করেছে আদালত। ফলে জামায়াতের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই বিএনপির সমর্থন নিয়ে ভোটে দাঁড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবার জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলে ২০০৮ সালের চেয়ে বেশি আসন দাবি করার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে আড়ালে-আবডালে। প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনের তেমন সুযোগ না পেলেও দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন, প্রচার টিম ও নির্বাচন নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে রেখেছে দলটি।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থায়ী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চায় জামায়াত। এ জন্য নিজেদের অবস্থান ভালো এমন কয়েকটি আসনে বিএনপিকে ছাড় না দেওয়ার চিন্তাও মাথায় রেখেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সর্বোচ্চ আসন পেয়ে সংসদে যেতে চায় তারা।
এ বিষয়ে জামায়াতের প্রভাবশালী নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সব দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন জোটগতভাবেই করবো। তবে দলীয় প্রতীক কী হবে, এ নিয়ে কাজ চলছে।’
১৯৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার পর জামায়াত দুটি নির্বাচন একসঙ্গে করেছে, আবার ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনও করেছে একসঙ্গে। আর এবার তারা যত আসনে ছাড় চাইছে জোটবদ্ধ কোনো নির্বাচনেই এত বেশি আসনে ছাড় পায়নি তারা। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির সমর্থনে ৩৫টি আসনে নির্বাচন করেছিল জামায়াত। আরও চারটি আসন উন্মুক্ত রাখা হয়, সেখানে বিএনপি ও জামায়াত-দুই দলেরই প্রার্থী ছিল।
তবে এখন চাপের মুখেও জামায়াত আরও বেশি আসনে ছাড় পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। একশটিরও বেশি আসনে প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। তবে সব আসনে তারা ছাড় পাবে না, এটাও জানেন তারা। তবে ৫০টিরও বেশি আসনে ছাড় পাওয়ার প্রত্যাশায় তারা।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অতীতে আমরা কম আসনে প্রার্থী দিলেও এবার আমরা শতাধিক আসনে নার্সিং করছি। যারা প্রার্থী ছিলেন অতীতে, আগামীতে হতে আগ্রহী তারা পরিস্থিতির আলোকে কাজ করছেন। পরে এখান থেকে যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সম্ভাব্য প্রার্থীরা কাজ করছেন। সেটা শতাধিক তো হবেই। তবে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় এখনো হয়নি।’ জোটভিত্তিক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত আছে জানিয়ে শিবিরের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচন তো জোটভিত্তিক করব, এখন পর্যন্ত এটাই সিদ্ধান্ত। তবে আমাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। আমরা ধানের শীষে নির্বাচন করব না।’
বিএনপির সঙ্গে আসন নিয়ে কোনো আলোচনা বা সমঝোতা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে জুবায়ের বলেন, ‘এসব বিষয় তফসিল ঘোষণার পর চিন্তা করা হবে। আর কত আসনে লড়বে জামায়াত সেটা তখন জোট থেকে সিদ্ধান্ত হবে।’
আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৯৯ সালে জামায়াত, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে জোট করে বিএনপি। পরে এরশাদ জোট ছেড়ে দিলে তার দলের একাংশ বিজেপি নামে জোটে থেকে যায়। আর বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ভোট যোগ হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি অভাবনীয় জয় পায়। তবে ২০০৮ সালে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করে বিএনপি। সেই সময় থেকে এখনো বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে আছে জামায়াত।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ১০টি আসনে জয়ী হয়। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসনে বিজয়ী হয়। ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবন্ধ নির্বাচনে ৩০টি আসনে ছাড় পায় জামায়াত। আর একটি আসন থাকে উন্মুক্ত। তখন জামায়াত ১৭টি আসনে জয়লাভ করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত দুটি আসনে জেতে।
এবার যেসব আসনে ভোটের প্রস্তুতি জামায়াতের
ঠাকুরগাঁও-২: আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১: মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৪: আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-৬: আনয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২: মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩: আজিজুল ইসলাম, রংপুর-৫: শাহ হাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-১: আজিজুর রহমান স্বপন, কুড়িগ্রাম-৪: নূর আলম মুকুল, গাইবান্ধা-৪: আবদুর রহিম সরকার, বগুড়া-৫: দবিবুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩: নুরুল ইসলাম বুলবুল, রাজশাহী-১: মুজিবুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪: রফিকুল ইসলাম খান, সিরাজগঞ্জ-৫: আলী আলম, পাবনা-১: নাজিব মোমেন, পাবনা-৫: ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩: মতিয়ার রহমান, যশোর-১: আজিজুর রহমান, যশোর-২: আবু সাইদ মুহাম্মদ সাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩: আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪: শহীদুল ইসলাম, খুলনা-৫: মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬: শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুছ, সাতক্ষীরা-১: ইজ্জতউল্লাহ, সাতক্ষীরা-২: আবদুল খালেক মণ্ডল, সাতক্ষীরা-৪: গাজী নজরুল ইসলাম, পটুয়াখালী-২: শফিকুল ইসলাম মাসুদ, পিরোজপুর-১: শামীম সাঈদী, পিরোজপুর-২: মাসুদ সাঈদী, শেরপুর-১: হাসান ইকবাল, ময়মনসিংহ-৬: জসিমউদ্দিন, ঢাকা-১৫: শফিকুর রহমান, ফরিদপুর-৩: মোহাম্মাদ খালেছ, সুনামগঞ্জ-৫: আব্দুস সালাম আল মাদানী, সিলেট-৫: ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬: হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১: সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম ১৫: আনম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২: হামিদুর রহমান আযাদ, পঞ্চগড়-১: আব্দুল খালেক, লালমনিরহাট-১: আবু হেনা মো. এরশাদ হোসেন সাজু, গাইবান্ধা-৩: নজরুল ইসলাম লেবু, গাইবান্ধা-৫: ওয়ারেছ আলম দুদু, বগুড়া-২: শাহাদুজ্জামান, বগুড়া-৪: তায়েব আলী, বগুড়া-৬: শাহাবুদ্দিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১: কেরামত আলী, রাজশাহী-৩: মাজিদুর রহমান, নাটোর-১: তাসনিম আলম, নাটোর-৪: দেলোয়ার হোসেন খান, পাবনা-৪: আবু তালেব মণ্ডল, সাতক্ষীরা-৩: রবিউল বাশার, কুষ্টিয়া-২: আব্দুল গফুর, বরগুনা-২: সুলতান আহমেদ, শরীয়তপুর-১: সাইফুল আলম খান মিলন, মৌলভীবাজার-১: আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১০: শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১১: মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম-১৬: জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার-৪: শাহজালাল চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও-৩: আবুল কাশিম, রংপুর-২ ওবায়দুল্লাহ সালাফী, গাইবান্ধা-১: মাজেদুর রহমান, জয়পুরহাট-১: ফজলুর রহমান সাঈদ, জয়পুরহাট-২: এস এম রাশেদুল আলম সবুজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২: ইয়াহিয়া খালেদ, নওগাঁ-৪: খ ম আব্দুর রাকিব, পাবনা-২: হেসাব উদ্দিন, মেহেরপুর-১: ছমির উদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা-২: রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ-২: নূর মোহাম্মদ, ঝিনাইদহ-৪: হাবীবুর রহমান, যশোর-৫: গাজী এনামুল হক, যশোর-৬: মুক্তার আলী, নড়াইল-২: মাহফুজুর রহমান, খুলনা-৪: কবিরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৫: আহসান হাবীব ইমরোজ, টাঙ্গাইল-৮: জাকারিয়া মুমেন, জামালপুর-২: সামিউল হক ফারুকী, ময়মনসিংহ-৫: মতিউর রহমান আকন্দ, নেত্রকোণা-৪: রুহুল আমীন, গাজীপুর-৪: এস এম সানাউল্লাহ, নরসিংদী-১: আ ফ ম আব্দুস সাত্তার, নরসিংদী-৫: পনির হোসেন, নারায়ণগঞ্জ-৫: সাইফুল ইসলাম, সিলেট-৩: লোকমান আহমদ, সিলেট-৪: জয়নাল আবেদিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪: কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম, কুমিল্লা-৯: এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, চাঁদপুর-৫: আবুল হোসেন, ফেনী-৩: ফখরুদ্দিন মানিক, নোয়াখালী-১: মোহাম্মদ উল্লা, নোয়াখালী-২: আলাউদ্দীন, নোয়াখালী-৫: ফখরুল ইসলাম, লক্ষীপুর-২: মাস্টার রুহুল আমিন, লক্ষীপুর-৩: আনোয়ারুল আজীম, চট্টগ্রাম-১: সাইফুর রহমান, চট্টগ্রাম-৪: আনোয়ার সিদ্দিকী চৌধুরী, কক্সবাজার-১: এনামুল হক মঞ্জু।