অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ড. কামাল হোসেন ও ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য এখনো প্রক্রিয়াধীন। এখনো তারা জাতীয় ঐক্যের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেননি। আর এই ঐক্যের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন নাম স্বর্বস্ব যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্প ধারার সভাপতি বি. চৌধুরী। এই ঐক্য প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বি. চৌধুরীর উদ্দেশ্য ও ভূমিকা নিয়ে রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষের মনে নানান ধরণের প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছিল। এখন দিন যত যাচ্ছে বি. চৌধুরী ও তার ছেলের আসল রূপ ততই প্রকাশ পাচ্ছে। বি. চৌধুরী, তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরী ও মেজর মান্নান যে সুকৌশলে বিএনপির ওপর পূর্বেকার প্রতিশোধ নিচ্ছে এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশের একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ হলেও তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এমনকি তিনি রাজনৈতিক জীবনে যে দল থেকে মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন সেই দলের নেতাকর্মীরাও সব সময় তাকে সন্দেহের চোখে দেখেছেন।
বি. চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে গভীর রাতে রুমে ঢুকে হত্যা করা হয়। ওই সময় সফর সঙ্গী হিসেবে পাশের রুমেই ছিলেন বি. চৌধুরী। কিন্তু, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হলেও বি. চৌধুরীর শরীরে কোনো আঁছড় লাগেনি। তিনি নিরাপদেই ছিলেন। এ ঘটনার পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সন্দেহের চোখে পড়ে বি.চৌধুরী।
এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া বি. চৌধুরীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। ওই সময় বি. চৌধুরী আবদার করেন যে, তার জীবনের শেষ ইচ্ছে রাষ্ট্রপতি হওয়ার। খালেদা জিয়া তার সেই ইচ্ছে পূরণ করে ২০০১ সালের নভেম্বরে তাকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেন।
কিন্তু, বঙ্গভবনে এক বছর না যেতেই পল্টি মারেন বি. চৌধুরী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মনোনীত সেনা প্রধান হারুন অর রশিদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতাচ্যুত করার চক্রান্ত করেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা মারফত তাৎক্ষণিকভাবে খালেদা জিয়ার কাছে এ খবর চলে আসে। এর পরই তাকে অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। যদিও জিয়াউর রহমানের মাজারে না যাওয়ার বিষয়টিকে সরকার সামনে এনেছিল। কিন্তু, আসল বিষয় ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত।
এছাড়া, বি. চৌধুরী এমপি পদ ছেড়ে দেয়ার পর তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরী ওই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি হয়েই তিনি বিএনপির মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রতিষ্ঠানেও অনৈতিক ভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। মাহির এসব কর্মকাণ্ড তখন তারেক রহমানের চোখে পড়ে। এবং তারেক রহমানের কাছে মাহির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে।
এরপর ২০০২ সালের ১৯ ও ২০ জুনের সংসদীয় দলের সভায় তরুণ এমপিদেরকে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পরামর্শ দেন তারেক রহমান। ওই বৈঠকেই বি. চৌধুরীকে ইমপিচ করার সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে, বি. চৌধুরী এখব জানতে পেরে সংসদে ইমপিচ প্রস্তাব উঠার আগেই তিনি ২১ জুন পদত্যাগ করেন। সঙ্গে সঙ্গে স্বপরিবারে বিএনপি থেকেও পদত্যাগ করেন।
বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ নামে নতুন দল গঠন করেন। তার এ দলে যোগ দেন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত আরেক নেতা মেজর মান্নান। ওই সময় থেকেই বি. চৌধুরী, মাহি বি. চৌধুরী ও মেজর মান্নান বিএনপির ওপর প্রতিশোধ নিতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা শুরু করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত দিনে বিএনপির বিভিন্ন সভায় বি.চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপিকে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। আসলে সবই ছিল লোক দেখানো। বিএনপিকে কোনঠাসা করার লক্ষ্যে তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, সর্বশেষ তিনি জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপির ওপর চূড়ান্ত প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করছেন। জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে খালেদা জিয়ার মুক্তি চওয়া যাবে না এবং তারেক রহমানকে দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া যাবে না এসব প্রস্তাব মূলত বি. চৌধুরীর পক্ষ থেকে দেয়া।
জানা গেছে, মাহি বি. চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের সঙ্গে ব্যবসা করেন। জয়ের পরামর্শেই মূলত মাহি তার বাবাকে দিয়ে এসব প্রস্তাব করাচ্ছেন। ইতিমধ্যে যা ফাঁসও হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যের চুক্তিপত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ স্বাধীনতা বিরোধী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে তারা জামায়াত বুঝলেও পরোক্ষ স্বাধীনতা বিরোধী নিয়ে গ-গোল বেধেছে। পরে ঐক্যের নেতারা জানতে পেরেছেন, এই শব্দ দুইটি মাহি বি. চৌধুরী বসিয়েছেন। পরোক্ষ স্বাধীনতা বিরোধী বলতে তিনি এখানে বিএনপিকে বুঝিয়েছেন। এনিয়ে এখন ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বি. চৌধুরী ও তার ছেলের টার্গেট হলো আগামীতে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্য যদি ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে যেকোনো ভাবে হোক তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেবে না। আর খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যও তারা কোনো উদ্যোগ নেবে না।