অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার এক সপ্তাহ পরও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ পাঁচ তরুণের। পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকার প্রতিটি থানায় ও ডিবি অফিসে খোঁজ নিয়েও তরুণদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউই নিখোঁজদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছেন না। এর আগে ১২ শিক্ষার্থীকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথমে স্বীকার করা হয়নি। পরে ৫ দিন পর তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়।
জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে হজ্জ ফেরত মা ও বড় ভাইকে আনতে গেলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমে দুই ভাইসহ তিন তরুণকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের বাসা থেকে আরো দুই তরুণকে তুলে নিয়ে যায়।
নিখোঁজ তরুণরা হলেন, ঢাকা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী শাফিউল আলম ও তার ভাই হাইটেক বাংলার কর্মকর্তা মনিরুল আলম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. আবুল হায়াত, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ ও ডগাইর ফাজিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসাইন মায়াজ।
এদিকে নিখোঁজের ৪ দিন পর তরুণদের কোনো খোঁজ না পেয়ে গত শনিবার রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিখোঁজের স্বজনরা। সম্মেলনে শাফিউল আলম ও মনিরুল আলমের মা রমিছা খানম বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ্ব পালন শেষে ঢাকায় পৌঁছে রাত সাড়ে ৮টায় বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য তারা মাইক্রোবাসে উঠেন। এসময় হঠাৎ একদল অপরিচিত লোক তার দুই ছেলে ও তাদের বন্ধু আবুল হায়াতকে বহু মানুষের সামনে গাড়ি থেকে নামাতে টানা হেঁচড়া শুরু করে। তাৎক্ষণিক তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ওরা পরিচয়পত্র ও অস্ত্র দেখিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ দাবি করে। পরে চোখের সামনে থেকেই তিন তরুণকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।
রমিছা খানম আরো জানান, সে রাতেই তার ছেলে শাফিউলকে নিয়ে গভীর রাতে তাঁর বাসায় যায় তারা। এ সময় বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা শাফিউলের অপর দুই রুমমেট সফিউল্লাহ ও নবম শ্রেণীর ছাত্র মোশারফ হোসাইন মায়াজকেও তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।
নিখোঁজ অন্য তিন তরুণের স্বজনরাও তখন সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন তাদের সন্তানদের গুম না রেখে আদালতে হাজির করার জন্য। বলেছেন কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। সন্তানরা অন্যায় করে থাকলে দেশে আইন আছে, প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই তাদের বিচার করা হোক। এভাবে গুম করে রাখায় তারা সন্তানদের নিয়ে অনেক ধরণের আশঙ্কা করছেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের পরও আরো দুই দিন চলে গেছে। সবমিলে নিখোঁজের ৭ দিন অতিবাহিত হতে চললেও তরুণদের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। এজন্য নানা আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন তরুণদের স্বজনরা। ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে এভাবে গুম হওয়ার পর পরবর্তীতে লাশ পাওয়া যাওয়া কিংবা চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার মত অনেক ঘটনা চোখের সামনে থাকায় তারা সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
সম্প্রতি মহাখালী ও তেজগাঁও থেকে ১২ শিক্ষার্থীকে বাসা থেকে তুলে নেয়ার ৫ দিন পর তাদেরকে আদালতে তোলা হয়। এসময়ও আদালতে তোলার আগে পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদেরকে গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করা হয়। তার দুদিন পরই এই ৫ তরুণকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলো। এবার ৭ দিন পার হয়ে গেলেও তাদেরকে আদালতে তোলা হয়নি কিংবা গ্রেফতারের কথাও স্বীকার করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতদিন নিখোঁজ থাকায় তরুণদের নিয়ে পরিবারগুলোর আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে।
কোনো অভিযোগ ছাড়া এভাবে নিরাপরাধ ছাত্রদেরকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করে রাখার ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছেন সুশীল সমাজ ও সচেতন মানুষ। তারা অবিলম্বে পুলিশের পোশাকে এই ধরনের অন্যায় আচরণ ও আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড বন্ধের দাবি জানান। এবং অতি শীগ্রই ৫ তরুণের অবস্থান নিশ্চিত ও আদালতে হাজিরের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের জোর দাবি জানান।