অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
যাত্রী উঠানামা নিয়ে দুই বাসের প্রতিযোগীতায় রাজধানীতে বাসচাপায় ২ শিক্ষার্থী নিহতের জের ধরে ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর রাজপথের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে শৃঙ্খলার নানা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছিলো শিক্ষার্থীরা।
লাইসেন্স চেক করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গাড়ি, মন্ত্রী, এমপি, পুলিশের গাড়িও আটকে দিয়েছিলো রাস্তায়। শিক্ষার্থীরা কয়েকদিনে দুর্নীতির সব চিত্রই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশ দিয়ে সরকার হামলা চালালেও পরবর্তীতে বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী এমপিরাও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের প্রশংসা করেছে। শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
বক্তৃতা বিবৃতে প্রশংসা করা সেই আন্দোলনকেই এখন সরকার বিরোধী আন্দোলন আখ্যা দিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কর্তৃক মামলা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ৫ দিন ধরে গুম রাখা ১২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার দেখানোর পর তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেই মামলা দেয়া হয়।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অংশ নেয়া ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়- উল্লিখিত ১২ আসামীসহ ৪০০/৫০০ জন সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে জনসাধারণের চলাচলের বাধা দান, সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্যকর্মে বাধা ও আহত করায় আসামীগণ দি পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১৪১/১৪৩/১৮৬/৩৩৩/৩৫৩/৩২৩/৩২৪ ধারার অপরাধ করিয়াছে।
রাষ্ট্রের পুলিশ কর্তৃক শিক্ষর্থীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে এনে মামলা করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহল। তারা বলছেন সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দেশের যেকোনো অরাজনৈতিক আন্দোলনকেও সরকারবিরোধী আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করছে। এটা কখনোই রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপদ সড়কের দাবি দেশের সর্বসাধারণের দাবি। এই দাবিতে শিক্ষার্থীরা অভূতপূর্ব ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলায় দেশ বিদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে এই আন্দোলন। এমন একটি ঐতিহাসিক আন্দোলনে অংশ নেয়ায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে স্বয়ং রাষ্ট্র মামলা করলে দেশে বিদেশে সরকার সমালোচিত হবে। দেশের মানুষও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। তারা সরকারকে অবশ্যই এই পথ থেকে সরে এসে অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর ৪০ জন শিক্ষার্থীকে রাজধানীর তেজগাঁও ও মাহখালীর বিভিন্ন বাসা ও মেস থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরবর্তীতে ডিবি অফিস থেকে ১২ জনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়। ৫ দিন ধরে তাদেরকে ডিবি অফিসে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। এই সময়ে তাদেরকে আটকের কথা অস্বীকার করে ডিবি ও থানা পুলিশ। পরে ১০ সেপ্টেম্বর তাদেরকে আদালতে তুলে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অভিযোগ এনে দুই দিন করে রিমান্ড নেয়া হয়।