অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, জাসদ, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিকল্প ধারাসহ বিশিষ্টজনেরাও আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে। কিন্তু সবার মতামতকে উপেক্ষা করেই নুরুল হুদা কমিশন এই ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য মাহবুব তালুকদারও ইভিএমের বিপক্ষে।
সিইসি নুরুল হুদার এ একতরফা সিদ্ধান্তে সকলেই অবাক হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। আর নুরুল হুদা যে আগামীতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছেন এটা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে।
কারণ, নুরুল হুদা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ইউনিয়নের ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত নাট্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।
এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর তৎকালীন বিএনপি সরকারকে উৎখাতে সচিবালের সামনে জনতার মঞ্চ তৈরি করেছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী কিছু সরকারি আমলা। ঐ মঞ্চের সঙ্গে নুরুল হুদা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। আর জনতার মঞ্চের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই নুরুল হুদার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে দাবি সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিমের। বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে মোফাজ্জল করিম দাবি করেছেন যে, জনতার মঞ্চে উঠে নুরুল হুদা নৃত্য করেননি, কিন্তু এর নেপথ্যে তার ভুমিকা ছিল। এটার বহু এভিডেন্স আছে।
ওই সময় তিনি কুমিল্লার ডিসির দায়িত্বে ছিলেন। তখন ডিসি অফিস থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবি নামানো হয়েছিল। বিষয়টি তিনি শুনেছিলেন বলে স্বীকারও করেছেন। একজন ডিসির অফিস থেকে তার অনুমতি ছাড়া কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রীর ছবি নামানোর সাহস কেউ দেখাতে পারে না।
নুরুল হুদা দাবি করেছেন যে, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু জানা গেছে, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তোলা তার একটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ধানমন্ডিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু গবেষণা সেল নামে যে প্রতিষ্ঠান আছে, নুরুল হুদা এর সদস্য ছিলেন। যা একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় কে এম নুরুল হুদাকে তাঁর পটুয়াখালীর বাউফলের বাসায় গিয়ে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জিয়াউল হক। বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মজিবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এন এন জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ফুল দেয়া ও মিষ্টি খাওয়ানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর নুরুল হুদার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক আরও বেড়ে যায়। আর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই নুরুল হুদা দাবি করলেও তিনি কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সময়ও সকলের মতামতকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আওয়ামী লীগের প্রস্তাব অনুযায়ী নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
এছাড়া, নুরুর হুদা যে আওয়ামী লীগের ঘরের লোক এটা এখন আবারও প্রমাণিত হলো।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ যে নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, তিনি এখন সেটার প্রতিদান দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ যে তার প্রতি অনুগ্রহ করেছে সেটার প্রতিদান হিসেবে তিনি আগামীতেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছেন। যার কারণে, সকলের মতামতকে উপেক্ষা করেই তিনি আগামী নির্বাচনে ভোট চুরির জন্য ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।