জুনায়েদ আব্বাসী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবেই খ্যাত নয়, এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামেরও প্রাণ কেন্দ্র। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখান থেকে শুরু হওয়া কোনো আন্দোলনই আজ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়নি। এমনকি ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সেনা শাসিত সরকারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে।
কিন্তু, সেই বিশ্ববিদ্যালয় আজ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে হার মানতে যাচ্ছে।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হয়েছে। গত এপ্রিলের শেষ দিকে আন্দোলনের ব্যাপকতা যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন আতঙ্কিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তড়িগড়ি করে সংসদে দাড়িয়ে ছাত্রদের দাবি মেনে নেন। যদিও তখন থেকেই এ ঘোষণায় সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মনে সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছিল।
কিন্তু, কিছু দিন যেতে না যেতেই শেখ হাসিনা তার মুখোশ খুলে ফেলে দিলেন। একদিকে কোটা সংস্কারে কমিটি গঠন করে শিক্ষার্থীদেরকে ঘুম পাড়িয়েছেন, অপরদিকে ডিবি পুলিশ দিয়ে কোটা আন্দোলনের নেতাদেরকে একের পর এক বাসা তুলে নিয়ে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছেন। এর সঙ্গে ছাত্রলীগ নামের পেটুয়া বাহিনী দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেন। এছাড়া সরকারের এই স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আখতারুজ্জামান।
সব মিলিয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন নব্য স্বৈরাচারের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
এখন রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আওয়ামী স্বৈরাচারের কাছে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হার মানতে যাচ্ছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি তার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য মুছে ফেলবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাবি যদি হেরে যায় স্বৈরাচারের কাছে বাংলাদেশ হেরে যাবে। এদেশের ছাত্র সমাজের ন্যায্য অধিকার আদায়ে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।