পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আসন্ন নির্বাচনের একজন প্রার্থীসহ অন্তত ৮৫ জন নিহত হয়েছেন। এএফপি বলছে, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি মানুষ। শুক্রবার বিকেলে বেলুচিস্তানের মাসটাং জেলায় এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বেলুচিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফয়েজ কাকর ওই বিস্ফোরণ ও হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। মাসটাং বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার কাছেই অবস্থিত।
ডন নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত প্রার্থীর নাম নওয়াবজাদা সিরাজ রাইসানি। তিনি সেখানকার প্রাদেশিক আসন পিবি-৩৫ এ বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) হয়ে লড়ছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে পেশোয়ারে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) নির্বাচনী সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে ২১ জন নিহত হন। ওই হামলায় এএনপির নেতা ও নির্বাচনের প্রার্থী হারুন বিলার প্রাণ হারান। পরে ওই হামলার দায় স্বীকার করে কট্টরপন্থী সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান, পাকিস্তান (টিটিপি)। এই টিটিপিই ২০১২ সালে হারুন বিলারের বাবা বশির বিলারকে হত্যা করে বলে দাবি করে।
ডন নিউজের খবরে বলা হয়, বেলুচিস্তানের মাসটাং জেলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) নির্বাচনী প্রচারণায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কোয়েটা হাসপাতাল সূত্র বলছে, এই হামলায় ১৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। হতাহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ হামলাকে আত্মঘাতী হামলা হিসেবে নিশ্চিত করেছেন বেলুচিস্তানের সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক আসলাম তারিন। হামলায় আট থেকে ১০ কেজি ওজনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা আসলাম তারিনের।
আহতদের কোয়েটা সিভিল হাসপাতাল, বোলান মেডিকেল কমপ্লেক্সে ও কোয়েটা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফয়েজ কাকর জানান। তিনি জানান, এসব হাসপাতালে ৪০টির মতো মরদেহ রয়েছে।
সিভিল হাসপাতালের মুখপাত্র ওয়াসিম বেগ বলেন, তাঁর হাসপাতালে ৫৩ জনের মরদেহ ও ৭৩ জন আহত ব্যক্তিকে আনা হয়। আহতদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
২০১১ সালে এই মাসটাং জেলাতেই গ্রেনেড হামলায় নিহত হয় সিরাজ রাইসানির কিশোর ছেলে। সিরাজের গাড়িতে ওই গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। ঘটনার সময় সিরাজ নিজেও গাড়ির ভেতরে ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
পাকিস্তানজুড়ে সহিংসতা
আগামী ২৫ জুলাই পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন। ইতিমধ্যে সেখানে বেশ কিছু নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটে গেছে। যার বেশির ভাগই বোমা হামলা বা আত্মঘাতী বিস্ফোরণের মতো ঘটনা। শুক্রবার ও গত মঙ্গলবারের বড় দুটো ঘটনা ছাড়াও ঘটে গেছে বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনা।
শুক্রবার সকালে বান্নু জেলায় বোমা হামলা হয় খাইবার পাখতুন খাওয়া প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আকরাম খান দুররানির নির্বাচনী প্রচারণায়। তবে এ হামলায় দুররানির তেমন কিছু না হলেও চার ব্যক্তি নিহত ও ৩২জন আহত হন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে খুজদার জেলায় বিএপির নির্বাচনী দপ্তরে বোমা হামলা হয়। এতে দুই ব্যক্তি আহত হন।
৭ জুলাই বান্নু জেলায় মুত্তাহিদা মজলিশ-ই-আমলের নির্বাচনী প্রচারণায় বোমা হামলা হয়। এতে দলটির প্রার্থীসহ অন্তত সাতজন আহত হন। এ ছাড়া এ মাসের শুরুর দিকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হামলা হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের কার্যালয়ে। এতে ১০ জন আহত হন।
সূত্র: প্রথম আলো