অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কথিত দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি জীবন-যাপন করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার কারাবাসের ২৭তম দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন কিনা এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন আগামী নির্বাচন কেন্দ্রিক রফাদফা করার চেষ্টা করছে। খালেদা জিয়া যদি সরকারের প্রস্তাবে রাজি হন তাহলে নির্বাচনের আগে মুক্তি পেতে পারেন। অন্যথায় খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে তারা প্রতিবেশি দেশ ভারতের সবুজ সংকেতও পেয়েছে। সেই আলোকেই আওয়ামী লীগ এখন সামনে এগুচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, তাদের টার্গেট যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। এজন্য তারা প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। আর খালেদা জিয়াকে যদি জেলে রেখেই নির্বাচন করতে হয় তাহলে সেই নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কারণ হিসেবে অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার মনে করছে খালেদা জিয়া যদি বাইরে থাকে তাহলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনেও সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বড় ধরণের সহিংসতা সৃষ্টি হলে দেশের পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। ক্ষমতা তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে যেতে পারে। আর আওয়ামী লীগ তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে ক্ষমতা দিতে চাচ্ছে না। তাদের টার্গেট ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখা। এজন্য তাদের ধারণা, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে বিএনপি নেতাকর্মীরা সরাসরি কারো নির্দেশনা পাবেনা। তারেক রহমানও দেশে নেই। তাই নেতাকর্মীরা আগের মতো এবার আরও মাঠে নামবে না। এর মধ্যে অনেকটা সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় চলে আসবে।
এরমধ্যে তারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য যা যা করা দরকার সবই করবে। কিছু ছাড় দিয়ে হলেও বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করবে।
খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই যদি নির্বাচন করতে হয় তাহলে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করবে সরকার। কারণ, খালেদা জিয়ার সাজাটা ইতিমধ্যে সবার কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষই মনে করছেন রাজনৈতিক কারণেই সরকার কথিত দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে জেলে ভরেছে। আর উচ্চ আদালতের বিচারপতিও বলেছেন এই মামলায় তাকে জামিন দেয়া যায়। এসব কারণে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখাকেও আরেক সমস্যা বলে মনে করছে সরকার। বেশি দিন আটকিয়ে রাখলে পরে হিতে বিপরীত হতে পারে বলেও মনে করছে সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এই কারণে সরকার নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাও করতে পারে।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই নির্বাচন করতে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সবুজ সংকেত দিয়েছে। ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকটের চেয়ে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত সংকটকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফল্ট করলে বড় ধরণের ক্রাইসিসে পড়তে পারে বলে মনে করছে ভারত। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ভারতের কাছে ভবিষ্যতের সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
তবে, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে নির্বাচন করতে ভারতের সবুজ সংকেত থাকলে মাঝে এখনো বাধা হিসেবে দাড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র এবার বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাচ্ছে। ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন না দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে, আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, ভারতকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কিছু করবে না। কারণ, ভারত হলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। আর ভারত হলো বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্র।
অপরদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এছাড়া জাতিসংঘসহ অন্যান্য দেশও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাচ্ছে।
জানা গেছে, এসব বিষয় নিয়ে এখন সরকারের উচ্চ মহলে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। কোন দিকে গেলে আন্তর্জাতিক মহলকে ম্যানেজ করেই আগামীতে আবার ক্ষমতায় আসা যাবে সেসব বিষয় ভাবা হচ্ছে। তবে, আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, অবশেষে ভারতের পরামর্শই সরকার গ্রহণ করতে পারে।