অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে সরকার বাধ্য করেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে যে অভিযোগ উঠেছে সরকার তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধান বিচারপতি যেভাবে চাইছেন আমরা সেভাবেই করেছি। সরকার এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। তবে, সময় যত যাচ্ছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার ঘটনার রহস্য ততই উম্মোচন হচ্ছে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সরকারের যেসব বিষয় নিয়ে সমস্যা হয়েছিল এর মধ্যে একটি ছিল অধস্তন আদালতের বিচারকদের আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণের অন্যতম একটি বিষয় ছিল বিচারকদের আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ করা।
বর্তমানে অধস্তন আদালতের বিচারক নিয়োগ, অপসারণ ও পোস্টিংয়ের ক্ষমতা আইনমন্ত্রণালয়ের হাতে। সরকারের নির্দেশের বাইরে একজন বিচারকের কিছুই করার ক্ষমতা নেই। আর বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি গেজেট প্রকাশ হলেই সরকারের হাতে আর ক্ষমতা থাকবে না। যেটা করতে চেয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
কিন্তু, সরকার এ গেজেট প্রকাশে দীর্ঘদিন ধরে গড়িমসি করে আসছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমনও বলেছেন যে, বিচারকদের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নিতে চাইছে। এনিয়ে আপিল বিভাগের সঙ্গে সরকারকে বসার জন্য বার বার সময় দিলেও আইনমন্ত্রী বসেন নি। সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনার আলোকে গেজেটও প্রকাশ করেন নি।
দেখা গেছে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাইরে চলে যাওয়ার পর গত ১৬ নভেম্বর রাতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞার বাসায় গিয়ে এনিয়ে আইনমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। এর মাত্র এক সপ্তাহ পর সোমবার বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি খসড়া গেজেট সুপ্রিমকোর্টে জমা দিয়েছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার বলেছেন, আপিল বিভাগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিচারকদের আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধির খসড়া গেজেট তৈরি করে সুপ্রিমকোর্টে জমা দিয়েছি। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা চলে যাওয়ায় এ সংকটের দ্রুত সমাধান হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনার আলোকে নয়, সরকার যেভাবে চাইছে আপিল বিভাগ সেটাই মেনে নিয়েছে। অর্থাৎ বিচারকদের নিয়োগ, অপসারণ ও পোস্টিংয়ের ক্ষমতা আইনমন্ত্রণালয়ের হাতেই রাখা হয়েছে। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতির পদে থাকলে যা কোনো ক্রমেই করা সম্ভব হতো না।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ কোনো সময়ই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায়নি। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যেই আজ প্রমাণ হয়েছে যে, ক্ষমতা ধরে রাখতেই সরকার সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এখন সরকার তার ইচ্ছে মতই সব কিছু করতে পারবে। সুপ্রিমকোর্টের চাওয়া অনুযায়ী আর কিছু হবে না। সরকার যেটা চাইবে আপিল বিভাগ সেটাই মেনে নেবে।
Discussion about this post