অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত ২৪ আগস্ট তারই বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী হত্যার চেষ্টা করেছিল মর্মে ভারতের অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজ১৮ডটকম একটি ভিত্তিহীন সংবাদ ছড়িয়ে দিয়েছে। সংবাদটির প্রতিবেদক সুবির ভৌমিক একজন সিনিয়র ও আলোচিত সাংবাদিক। ভারত সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুবির ভৌমিকের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ট। ভারত সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট রিপোর্টগুলো সুবির ভৌমিক বেশি করে থাকেন। এমনকি সুবির ভৌমিক ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর ইশারাতেই সব কিছু করেন বলেও জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে তার বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মর্মে যে নিউজ সুবির ভৌমিক করেছেন এটাও ভারত সরকারের ইশারাতেই হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, প্রতিবেদনটি সন্দেহযুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো এটা প্রকাশ করেনি। কয়েকটি গণমাধ্যম এটি প্রকাশ করলেও অল্প সময়ের ব্যবধানেই আবার প্রত্যাহার করে নেয়। প্রতিবেদনটিকে ভিত্তিহীন মনে করে এটাকে আর কেউ যাছাই বাছাই করারও চিন্তা করেনি। বলা যায় এনিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর কোনো আগ্রহ নেই বললেই চলে।
কিন্তু, তিনটি গণমাধ্যম এটা নিয়ে বেশ তৎপরতা দেখিয়েছে। কথিত সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবুর ৭১ টিভি, সাংবাদিক পীর হাবিবের পূর্বপশ্চিমবিডি অনলাইন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ইত্তেফাক প্রতিবেদনটিকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। সরকার, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য গণমাধ্যম এটাকে গুজব বললেও এই তিনটি গণমাধ্যম বেশ আগ্রহ নিয়ে এটা প্রচারের চেষ্টা করেছে।
তাদের এই আগ্রহ নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকেই নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তবে, তারা তিনজনই যে ভারতের এ দেশিয় এজেন্ট এতে কারো কোনো দ্বিমত নেই। তারা সব সময়ই ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এমনকি ভারতের দেয়া ছক অনুযায়ীই তারা গণমাধ্যম পরিচালনা করছেন।
খোঁজ নিয়ে অ্যানালাইসিস বিডি জানতে পেরেছে, ৭১ টিভির সম্পাদক ও ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল বাবুর চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা সবই ভারত কেন্দ্রিক। তিনি বড় কোনো সাংবাদিক ছিলেন না। মোজাম্মেল বাবুকে ৭১ টিভির অনুমোদন দেয়ার পরই এনিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে যায়। তার টাকার উৎস নিয়ে শুরু হয় কানাঘুষা। পরে জানা গেছে, টিভি চ্যানেল পরিচালনার সব টাকাই দিচ্ছে ভারত। আর ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ীই চ্যানেলটি পরিচালনা করছে মোজাম্মেল বাবু। একটি সূত্রে জানা গেছে, একাত্তর টিভির অফিসে নিয়মিত যাতায়াত করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। তাদের নির্দেশেই সেদিন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন করতে মোজাম্মেল বাবু তার চ্যানেলে ব্রেকিং দিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। যদিও পরে এই ব্রেকিং প্রত্যাহার করতে হয়েছে। কিন্তু, মোজাম্মেল বাবুর মনোকষ্ট যায়নি। রাতে আবার এটা নিয়ে টকশোরও আয়োজন করে মোজাম্মেল বাবুর একাত্তর টিভি। চ্যানেলটির সাংবাদিক ফারজানা রুপা আবার টকশো থেকেই ভারতের সেই সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, মোজাম্মেল বাবু মূলত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ‘র’ এর ইশারাতেই তিনি আমাদের সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে ব্রেকিং দিয়েছেন। ভারত যে পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার ভিত্তিহীন রিপোর্ট করেছে, তাদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে একাত্তর টিভি।
এরপর, ভারতের অনুগত হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক পীর হাবিবও তার সম্পাদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডিতে প্রকাশ করেছিলেন। পরে নিউজটি প্রত্যাহার করে খুব কষ্ট পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। নিজের কষ্ট নিয়ে তার পত্রিকায় একটি মন্তব্য প্রতিবেদনও তিনি লিখেছেন।
পীর হাবিব বলেছেন, টকশোতে এই চাঞ্চল্যকর, ভয়ংকর সত্য নিয়ে আলোচনার পর বন্ধু মঞ্জুরুল ইসলামের অফিস কক্ষে কফি পান করতে করতে দেখলাম তিনি একের পর এক টেলিফোন ধরছেন, নিউজ ব্ল্যাকআউট করছেন। পূর্বপশ্চিমবিডি নিউজের সম্পাদক খুজিস্তা নূর ই নাহরীন তিনিও আমাদের নিউজ পোর্টাল থেকে এই খবর ব্ল্যাক আউট করে দিচ্ছেন। আমি নিজেও অনেক টেলিফোনের জবাবদিহিতার মধ্যে পড়লাম। এই রকম একটি খবর ব্ল্যাক আউট করতে গিয়ে একজন সংবাদকর্মী হিসাবে এত বছর কাটিয়ে এসে মনে হচ্ছিল, নিজের বুক কাটছি। মধ্য রাতে টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ জার্নাল দেখতে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবুকে অভিনন্দন জানাতে ইচ্ছা করলো। তিনি এই সংবাদ নিয়ে বিস্তর আলোচনাই করান নি। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার বা সিনিয়র সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের সঙ্গে সরাসরি উপস্থাপিকা ফারজানা রূপার টেলিফোন সাক্ষাতকারটিও শুনতে পেলাম। সুবীর ভৌমিক বলছেন, ঘাস কেটে তিনি সাংবাদিক হননি। কলকাতায় বসে অনুপ চেটিয়ার গ্রেপ্তারের খবর যেমন আগাম দিয়েছিলেন; তেমনি বিলম্ব হলেও শেখ হাসিনা হত্যার ষড়যন্ত্র বানচালের খবরটি দিয়েছেন সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছিলেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যোগসূত্রে কিভাবে এই হত্যা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা হয়েছিল এবং তা বানচাল হয়েছে।
সাংবাদিক পীর হাবিব যে বাংলাদেশে ভারতের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন এটা সবারই জানা। পীর হাবিরের ধর্মগুরু, শিক্ষাগুরু সবই ভারতে। ভারতের গুরুদের পরামর্শ ছাড়া পীর হাবিব কিছুই করেন না। পূর্বপশ্চিম বিডি চালু করার আগে একাধিক বার ভারত গিয়ে পরামর্শ নিয়ে এসেছেন। কার সঙ্গে পরামর্শ করেছেন এবং তার কি পরিকল্পনার কথা ভারতের গুরুদেরকে জানিয়েছেন। পরে দেশে এসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এসব মানুষকে অবহিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পীর হাবিব যে অনলাইন নিউজ পোর্টালটি চালাচ্ছেন এর সব খরচ দিচ্ছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন। মোজাম্মেল বাবুর মতো পীর হাবিবও ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন বলেও মনে করছেন অনেকে।
তারপর, তৃতীয়জন হলেন ইত্তেফাক সম্পাদক ও সরকারের পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। সকল গণমাধ্যম প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার সংবাদটি প্রত্যাহার করে নিলেও ইত্তেফাক পত্রিকা পরের দিন অর্থাৎ রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নিউজটি প্রকাশ করে অনলাইন ভার্সনের হোমপেইজে রেখেছে। বলা যায়, যারা এ নিউজ বিষয়ে জানতো না তারা ইত্তেফাক থেকেই জেনেছে। এনিয়ে এখন ব্যাপক গুঞ্জন ও কানাঘুষা শুনা যাচ্ছে।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতের সাপোর্টেই আনোয়ার হোসেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। সুন্দরবন ধ্বংসে রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর ইশারাতেই প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার ভিত্তিহীন খবরটি ইত্তেফাক পত্রিকায় সারাদিন শো করে রাখছে বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মঞ্জুর মত পাল্টাতে বেশি সময় লাগে না। শেখ মুজিব হত্যার পরের দিন ইত্তেফাকের রিপোর্ট ছিল কর্নেল ফারুক-রশিদদের পক্ষে। সেদিন ইত্তেফার শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডকে মর্মান্তিক ঘটনা বলেও উল্লেখ করেনি। যেখানে স্বার্থ আছে সেখানে মঞ্জু আছে। যেখানে স্বার্থ নেই সেখানে মঞ্জু নেই। মঞ্জু তার ব্যক্তি স্বার্থেই ভারতের ফাঁদে পা দিয়েছে।
Discussion about this post