সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশকে আসামী করে মামলা দায়ের করায় মামলার বাদীর বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে দুবৃত্তরা।
মামলা তুলে না নিলে বাড়ির সবাইকে হত্যা করা হবে বলে হুমকী দেয়া হয়। গত শুক্রবার রাত তিনটার দিকে সদরের কাথন্ডা গ্রামের মামলার বাদির বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় দুর্বৃত্তরা বাদীর বাড়ি-ঘর ভাংচুর, মালামাল লুটপাট, কয়েকটি দামি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়াসহ বাদী বজলুর রহমানের ছেলে রাকিবুজ্জামানকে ব্যাপক মারপিট করে। মামলা তুলে না নিলে বাদীর স্ত্রী ও বোনকে জীবন নাশের হুমকী দেয়া হয়।
বাদী বজলুর রহমান জানান, প্রথমে দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে যেয়ে তাকে ডাকা ডাকি করতে থাকে। ঘর থেকে বলা হয় তার বাবা বাড়িতে নেই। এসময় তারা প্রথমে বারান্দার গ্রিল ভাঙে। পরে ঘরে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর মামলার বাদীকে না পেয়ে তার ছেলেকে ব্যাপক মারপিট করে। ছেলে বলে আমি অনেক অসুস্থ। আমাকে মারবেন না। তখন দৃবৃত্তরা বলে তোর বাপকে মামলা তুলে নিতে বলবি নইলে তোকে মেরে ফেলবো। সন্ত্রাসীদের মাথায় হেলমেট ছিল ও তাদের সঙ্গে তিনজন পুলিশ সদস্য ছিল বলে ঘটনায় বাদীর স্ত্রী জানান।
সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি মারুফ আহম্মদ জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায় পুলিশের নির্যাতনে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসধীন অবস্থায় মাদরাসা সুপারের মৃত্যুর ঘটনায় দুইজন এসআইও চার পুলিশ অফিসারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করে নিহতের ভাই। নিহতের বড় ভাই মো: বজলুর রহমান বাদি হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা আমলি আদালত (১) এ এই মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত পূর্বক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামীরা হলেন- সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই আসাদুজ্জামান, এসআই পাইক দেলওয়ার হোসেন, এএসআই শেখ সুমন হাসান ও এএসআই আশরাফুজ্জামানসহ অজ্ঞাত দুই কনস্টেবল।
নিহতের নাম মাওলানা সাইদুর রহমান। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাথন্ড গ্রামের মৃত দিলদার রহমানের ছেলে ও কলারোয়ার বাকসা হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদরাসার সুপার ছিলেন।
মামলার আরজিতে বর্ণিত অভিযোগে বলা হয়, নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে সদর থানার এসআই আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে উল্লিখিত পুলিশ সদস্যরা তিনটি মোটরসাইকেলে তার ভাই সাইদুর রহমানের বাড়িতে এসে ঘরের দরজায় ধাক্কাধাক্কি ও ডাকাডাকি করতে থাকে। পুলিশ পরিচয় পেয়ে সাইদুর রহমান বলেন, আমার নামে কোনো মামলা নেই বা ওয়ারেন্টও নেই, আপনারা গ্রেফতারি পরোয়ানা না দেখালে আমি দরজা খুলব না।
পুলিশ তখন ঘরের দরজায় লাথি মারতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে সাইদুরের স্ত্রী দরজা খুলে দিলে আসামিরা ঘরে ঢুকে তার দু’হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়।
জানতে চাইলে অশ্রাব্য ভাষায় তিরস্কার করে এবং এক লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আসামিরা গলাধাক্কা দিতে দিতে সাইদুরকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে এবং উঠানে ফেলে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে পুলিশ সাইদুরকে নিয়ে থানায় চলে আসে। ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে বাদিসহ অন্যরা থানায় এসে তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আসামি এসআই আসাদুজ্জামান জানায় এক লাখ টাকা না দিলে তাকে ছাড়া হবে না। একপর্যায় টাকা দিতে সম্মত হলে পুলিশ মারধর বন্ধ করে। এর কিছুক্ষণ পর তাকে কোর্টে চালান করে দেয়া হয়।
বাদি নিজে কোর্ট হাজতে দেখা করতে গেলে সাইদুর জানান, তার ওঠা-বসার কোনো ক্ষমতা নেই। তার সমস্থ শরীর ফুলে গেছে এবং মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছে। কারাগারে প্রেরণ করার পর তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে কারা কর্তৃপক্ষ ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ২-৩টার দিকে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
খবর পেয়ে বাদিসহ অন্য সাক্ষীরা রাত সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালে চলে আসেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাইদুর রহমান হাসপাতালে মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের পরিবারের সদস্যদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৯টার দিকে তার লাশ দাফন করা হয়। বাদির অভিযোগ পুলিশ সাপের মতো পিটিয়ে তার ছোট ভাই সাইদুরকে হত্যা করেছে। তিনি এ ব্যাপারে ন্যায়বিচার দাবি করেন।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মো: বজলুর রহমান বাদি হয়ে দন্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় সাতক্ষীরা আমলি এক নম্বর আদালতে উল্লেখিতদের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিচারক হাবিবুল্লাহ মাহমুদ বাদির অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সাতক্ষীরায় পুলিশের নির্যাতনে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাদরাসা সুপারের মৃত্যুর ঘটনায় দুইজন এসআই ও চার পুলিশ অফিসারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
সূত্র: শীর্ষনিউজ
Discussion about this post