ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ এককভাবে যে সব বক্তব্য দিচ্ছেন তার সত্যতা নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এমনটি জানিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খান।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানতে আমাকে প্রধানমন্ত্রী ডেকেছেন। প্রায় ৪০ মিনিট তার সঙ্গে কথা হয়।’
আরাস্তু খান বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে কোনো পরিচালকের বক্তব্য বোর্ডের বক্তব্য হতে পারে না। তার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিব্রত। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ডের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ জাকাত ফান্ডে আছে মাত্র ২৮ কোটি টাকা।’
গত কয়েকদিনে ভাইস চেয়ারম্যান যেসব তথ্য গণমাধ্যমকে দিয়েছেন তা পুরোপরি অসত্য বলে দাবি করেন ব্যাংক চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলে ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আরাস্তু খান এসব কথা বলেন। এ সময় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হামিদ মিঞা এবং বেশ কয়েকজন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে আরাস্তু খান বলেন, সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ না জেনে কথা বলেন। তার সঠিক জ্ঞান নেই। তিনি পরিচালকের অর্পিত দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেটা পর্ষদের বিষয়। পর্ষদ যা ভালো মনে করবে সেটাই হবে।
আরাস্তু খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সবার সহযোগিতা পেয়ে আসছি। সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে গণমাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। বিষয়টি স্পষ্ট করতেই সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি এরপর ব্যাংকের ১ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক ও দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে।
তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে। ৩৪ বছরের ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিসহ সার্বিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে ব্যাংকটি। সম্প্রতি গণমাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভার বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষত জাকাত ফান্ডের অর্থের ব্যবহার বিষয়ে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা নিতান্তই বিভ্রান্তিকর। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে জমা হয়েছে ৩৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৭৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিতরণযোগ্য জাকাতের পরিমাণ ২৮ কোটি টাকা। সুতরাং সরকারি জাকাত ফান্ডে ৪৫০ কোটি টাকা প্রদানের সুযোগ নেই এবং এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গত বোর্ড সভায় ব্যাংকের সিএসআর সুবিধাভোগীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংক মুনাফার একটি বড় অংশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ দুস্থ ও আর্ত-মানবতার সেবায় ব্যয় করছে। নিয়মনীতি মেনে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ করা হয়ে থাকে। ব্যাংকের ১৯ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে খতিয়ে দেখার কোনো সিদ্ধান্তও বোর্ড সভায় গ্রহণ করা হয়নি। প্রতি বছর শাখাগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী রমজানে ইফতার বিতরণ করা হয়। এ বছর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যান বলেন, বোর্ড সভার বরাত দিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের ১৩ কোটি টাকার ইফতার বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে মর্মে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাও সঠিক নয়। তাছাড়া ব্যাংকের জনসংযোগ, মার্কেটিং ও সিএসআর বিভাগের প্রধানদের বদলি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা কমানোর আলোচনাই হয়নি বোর্ড সভায়।
ব্যাংকের বোর্ড সভার যে কোনো সিদ্ধান্ত বোর্ডের কার্যবিবরণী স্বাক্ষরের আগে বোর্ডের সিদ্ধান্ত হিসেবে কোনো বক্তব্য প্রদান করা এমনকি বোর্ড চেয়ারম্যানের পক্ষেও সঠিক নয়। ব্যক্তিগতভাবে কোনো পরিচালকের বক্তব্য বোর্ডের বক্তব্য হতে পারে না বলে জানান আরাস্তু খান।
সূত্র: যুগান্তর
Discussion about this post