লেনিন শুভ্র
রোববার ছিল আন্তর্জাতিক গুম দিবস। সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালিত হয়েছে। সরকারি উদ্যাগে নয়, যেসব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছেন সেই সব দলগুলো আরো গুম হয়ে যাওয়া কিছু ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা এই দিবসটি পালন করেছে। সরকারের বাধার কারণে আবার গুম হওয়া অনেকের পরিবার দিবসটি পালন করতে পারেনি।
আরেকটি বিষয় হলো-আন্তর্জাতিক এই গুম দিবসের দিনেই ছিল পবিত্র আশুরার দিন। এই দিনটি সারাবিশ্বের মুসলমানদের কাছে খুবই হৃদয় বিদারক ঘটনা। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও পবিত্র আশুরা পালন করা হয়েছে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো-ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। এখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন-১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডও ছিল বাংলাদেশের জন্য আরেকটি কারবালা। কারবালার প্রান্তরে নারী-শিশুদেরকে হত্যা করা হয়নি। কিন্তু ১৫ আগস্টে নারী-শিশুদেরকেও রেহাই দেয়া হয়নি।
কারবালার ইতিহাস আর ১৫ আগস্টের ইতিহাস কি এক? কোথায় কারবালা আর কোথায় ১৫ আগস্ট! কারবালা ছিল ইসলাম ও কুফরি শক্তির মধ্যে যুদ্ধ। ইয়াজিদ বাহিনী রাসুল (স.)র দৌহিত্র ইমাম হোসাইনকে শহীদ করে ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে চেয়েছিল। ইমাম হোসেন শহীদ হয়েছেন আল্লাহর দীনের জন্য।
আর ১৫ আগস্ট ছিল শেখ মুজিব ও তার গুন্ডা ও সন্ত্রাসী বাহিনীর সীমাহীন আকাম-কুকামের ফল। মুজিব বাহিনীর হাতে শুধু সাধারণ মানুষই নির্যাতিত হয়নি, সেনা কর্মর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মুজিবের ছেলে শেখ কামাল গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে মেজর ডালিমের স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি করেছিল। মেজর ডালিম শেখ মুজিবের কাছে এর বিচার দিয়েও কোনো সাড়া পায়নি। তারপর শেখ মুজিব প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছিল যে, আমার লক্ষী বাহিনী আছে। সেনাবাহিনীর কোনো দরকার নাই। শেখ মুজিবের সেই লক্ষীবাহিনী সেনা বাহিনীর সদস্যদেরকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতো। এরপরই সেনা অফিসাররা মুজিবের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
এরপর, ওই সময় সারাদেশে অপরাধ-অপকর্ম ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে। মুজিব বাহিনীর লোকেরা খুন-হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, ব্যাংক লুট, মানুষের জমি দখল. চাদাবিজসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করেনি।
বিদেশি সাংবাদিক অ্যান্থনী মাসকারেণহাস তার লেখা ‘‘বাংলাদেশ রক্তের ঋণ’’ বইয়ে শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। কি কারণে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মুজিবকে হত্যা করেছিল তিনি সেটা সুন্দরভাবে লিখেছেন। ওই সময়কার সার্বিক পরিস্থিতি কি ছিল সেটাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
মোট কথা-মুজিবের পতন ছিল একটা ফ্যাসিবাদের পতন। একনায়ক ও স্বৈরাচারের পতন। তার পতনের মাধ্যমেই এদেশের মানুষ দীর্ঘদিনের শোষণ, বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার থেকে মুক্ত হয়েছিল। ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের জন্য শোকের দিন হলেও এদেশের মানুষের জন্য ছিল সেটা মুক্তির দিন।
কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে-একজন স্বৈরাচার ও বাকশালের প্রতিষ্ঠাতার মরার দিনকে কারবালার ঘটনার সাথে তুলনা করছেন শেখ হাসিনা!