অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বিগত ১১ বছর ধরে খেলে আসছেন শেখ হাসিনা। এরশাদ ও তার দলটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যখন যা খুশি তাই করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ছিল সরকারের শরিক দল। তখন সংসদে বিরোধীদল ছিল বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে যখন বিএনপি-জামায়াত জোটসহ অন্যান্য দলগুলো অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন এরশাদও নির্বাচন থেকে সরে আসে। এরশাদের এই সিদ্ধান্তের পরই মাথা নষ্ট হয়ে যায় শেখ হাসিনার।
কারণ, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না আসলে বিরোধীদল হওয়ার মতো অন্য কোনো দল ছিল না। আর এ অবস্থায় নির্বাচন হলেও সেটা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সেজন্য এরশাদকে নির্বাচনে আনতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক দিয়ে প্রচ- চাপ সৃষ্টি করা হয়। শেখ হাসিনার এই চাপ সহ্য করতে না পেরে এরশাদ তো একদিন নিজের পিস্তল দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন।
এরপর এরশাদ যখন কোনোভাবেই নির্বাচনে আসতে রাজি হননি তখন তাকে অসুস্থ বানিয়ে জোর করে সিএমএইচে ভর্তি করলেন। এরশাদকে হাসপাতালে রেখে এদিকে রওশনকে বিরোধী দলের নেতা বানানোর লোভ দেখিয়ে তাকে ম্যানেজ করেন হাসিনা। আর বেকায়দায় পড়ে হাসপাতাল থেকে এরশাদও নির্বাচনে যেতে রাজি হয়। তবে স্বেচ্ছায় নয়, ডিজিএফআই জোর করে এরশাদের স্বীকারোক্তি নিয়েছিল ওই সময়।
এরপর থেকেই বিভক্ত হয়ে পড়ে এরশাদের জাতীয় পার্টি। রওশনকে বিরোধী দলের নেতা বানিয়ে এক গ্রুপ সরকারি হালুয়া রুটি খেতে শুরু করে আর অপর গ্রুপ এরশাদের পক্ষে থাকে। এরপর মঞ্জু হত্যা মামলা দিয়ে এরশাদকে মুলার মতো পাঁচ বছর ঝুলিয়ে রেখেছে হাসিনা। এরশাদ একটু নড়াচড়া করলেই হাইকোর্টে মঞ্জু হত্যা মামলার শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হতো। এভাবেই ছলে বলে কৌশলে জাতীয় পার্টিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে শেখ হাসিনা।
এরপর গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটডাকাতির নির্বাচনে আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ নির্বাচন করে। প্রথম দিকে বিএনপি সংসদে যোগ না দেয়ায় জাতীয় পার্টিকেই সরকার আবার বিরোধী দলের আসনে রাখে। এরশাদ হন বিরোধী দলীয় নেতা। এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ে যান শেখ হাসিনা।
কারণ, এরশাদ জীবিত অবস্থায় তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে লিখিতভাবে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হবেন। আর জিএম কাদের সব সময় শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলেন। তাই শেখ হাসিনার আশঙ্কা ছিল জিএম কাদের বিরোধী দলের নেতা হলে যেকোনো সময় কোনো সংকট সৃষ্টি করতে পারেন। এমনকি, প্রয়োজনে সংসদ থেকে বেরিয়েও যেতে পারেন। ভবিষ্যতে এমন ধরণের কোনো ঘটলে তখন সংসদ টিকিয়ে রাখাই শেখ হাসিনার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি শেখ হাসিনার ইঙ্গিতেই সরকারের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত আনিসুল ইসলাম মাহমুদ রওশন এরশাদকে বেআইনি চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়ে তাকে বিরোধী দলীয় নেতা করতে স্পীকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। আর এক্ষেত্রে দূতিয়ালী করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। যদিও ওবায়দুল কাদের বলছেন যে, জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক ঘটনা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
কিন্তু বাস্তবতা হলো-জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শেখ হাসিনা এখন মরিয়ে হয়ে উঠেছিলেন। কারণ, দলটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে তিনি ভবিষ্যতে অশনিসংকেত দেখছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রওশনকে বিরোধী দলের নেতা করতে যা যা করার দরকার সরকার সবই করেছে। জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপকে নিয়ে ডিজিএফআইয়ের অফিসে একাধিক মিটিংও হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত জিএম কাদেরকে মানতে বাধ্য করেছে ডিজিএ্ফআই। সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকেই শনিবার রাতে সমঝোতায় আসেন জাপা নেতারা।