অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
৩০১ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, মারামারি ও সংগঠনটির নারী নেত্রীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ পড়া অর্থাৎ পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সেক্রেটারি গোলাম রাব্বানীর অনুসারীরা এ হামলা নির্যাতন চালায়। হামলা-নির্যাতনের রক্তাক্ত ছবিগুলো এখন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিশিষ্টজনসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ছাত্রলীগের এমন বর্বর কর্মকা-ের ধিক্কার জানাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও ছাত্রলীগের এই ন্যাক্কারজনক কর্মকা-ে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু মেয়েদের ওপর এমন বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলা-নির্যাতনের ঘটনাকে অতি ছোট্ট ও সাধারণ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে একটি সভা শেষে ছাত্রলীগের মারামারি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেছেন- এটা একটি ছোট্ট ও সাধারণ ঘটনা। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
ছাত্রলীগের এমন বর্বরোচিত ঘটনাকে হানিফ কিভাবে সাধারণ ঘটনা বলছেন তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে অনেকেই আবার বলছেন, হানিফের বক্তব্য এক যুক্তিতে ঠিকই আছে। ঢাবির মারামারির ঘটনা আসলেই সাধারণ। কারণ, হানিফ আর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাত হলো রক্তেরঞ্জিত। তারা সব সময় মানুষের শরীর থেকে রক্ত ঝরাতে পছন্দ করেন। কিছু দিন আগেও এই ঢাবি ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে তারা। কোটা আন্দোলনের নেতাকর্মীদেরকেও এই ক্যাম্পাসে তারা টিপিয়ে রক্তাক্ত করেছে। অনেকের শরীরের হাড় ভেঙ্গে দিয়েছে।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের অনুসারীদেরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করছে। চাপাতি দিয়ে নিজেদের কর্মীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নিচ্ছে। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস হলো রক্তাক্ত ইতিহাস। রাজপথে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করার ইতিহাস তাদের আছে। পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে দর্জি বিশ্বজিৎ কুপিয়ে হত্যা করেছিল এই ছাত্রলীগই। মঙ্গলবারের ঢাবির ঘটনা অবশ্যই এগুলোর চেয়ে বড় নয়।
ছাত্রলীগের ইতিহাস ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে ভরপুর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করেছিল ছাত্রলীগ নেতাই। শুধু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই নয়, এখন তারা মানুষের বাসা-বাড়িতে ঢুকেও মহিলাদেরকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করছে। সেই অনুযায়ী ঢাবির ঘটনা বড় নয়। কারণ, এখানে হালকা নির্যাতন করা হয়েছে। কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়নি। এসব দিক বিবেচনায় নিলে অবশ্যই হানিফের কথার যৌক্তিকতা আছে।