অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতার আসার থেকেই চলছে ব্যাংক লুটপাট ও দখলের মহোৎসব। আমাদের অনুসন্ধানে দেখা যায় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক মিলে ১০টি ব্যাংককে একেবারেই পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভেও হাত দেয়া হয়েছে। জিডিপি আর প্রবৃদ্ধির যতো গল্প শোনানো হচ্ছে বাস্তব অবস্থা ঠিক তার বিপরীত। দুবৃত্ত আর লুটেরাদের কালো থাবায় বিপর্যস্ত গোটা আর্থিক খাত ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা। বিশেষ ব্যক্তি, কোম্পানী এবং গোষ্ঠীর পেটে চলে যাচ্ছে অধিকাংশ ব্যাংক। মন্দ ঋণ, লুটপাট, বায়বীয় কোম্পানীর নামে বিনিয়োগ, বিদেশে অর্থ পাচার অপর দিকে সরকারের দখলনীতির কারণে গোটা অর্থনীতির পর্যদস্তু অবস্থা।
আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে এমন বেহাল দশা আর কখনো হয়নি। সরকারি ব্যাংকগুলোতে সরাসরি লুটপাট এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সম্পূর্ণ নিয়মনীতি বহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক পরিচালকদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে সরকারের অনুগত লোকদের বসিয়ে ব্যাংক দখলের এক নতুন নিয়ম আবিষ্কার করেছে বর্তমান রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারী অবৈধ সরকার। সরকারের শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খলীকুজ্জামান গত ২৭ নভেম্বর রাজধানীতে এক সেমিনারে খোলামেলাভাবেই বলেছেন, খাল, নদী দখলের মতো ব্যাংকগুলোও দখল হয়ে যাচ্ছে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষতায় আসার সাথে সাথে সরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারের পছন্দের লোকদের দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়। সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত দলীয় লোকদের দিয়ে চলে লুটপাটের ব্যবস্থা। লুটপাট করে শেষ করে দেয়া হয় বেসিক ব্যাংকের মূলধন। হলমার্ক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। নামে- বেনামে বায়বীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বিতরণ করে লুটপাট করা হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যে দেশের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ব্যাংকের ফান্ড লুটপাটের এক সপ্তাহ পর বিদেশী গণমাধ্যম মারফত দেশের জনগণ জানতে পারে রিজার্ভ চুরি হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলো মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকায় মৃতপ্রায় রোগীর মতো অক্সিজেন দিয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অ্যানালাইসিস বিডি’র অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত দশ বছরে অর্থাৎ হাসিনা সরকারের আমলে ১০ বছরে ব্যাংক খাত থেকে থেকে লুটপাট হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুট হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংক থেকে লুটপাট হয়েছে ৮০০০ টাকারও বেশি। ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৫০০০ টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে অনিয়ম হয়েছে ১০০০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক থেকে লুট হয়েছে ৪৫০০ টাকা। জনতা ব্যাংক থেকে দফায় দফায় লুট হয়েছে ৬৬০০ টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে নতুন করে মূলধন জোগান দিতে ২০১৭ সালের জুনে ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। কিন্তু এতে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে বলে মনে হচ্ছে না। গোটা ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাত এখন তলাবিহীন ঝুড়ির মতো অবস্থা। সরকারি ব্যাংকগুলো লুটপাট করার পর সরকারের নজর পরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দিকে। তারা একে একে দখল করতে থাকে সেরকারি ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ লুট:
কোন রাষ্ট্রের রিজার্ভ লুট হওয়া এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। ফেব্রুয়ারিতে চুরি হলেও তা প্রকাশ পায় এক মাস পর মার্চে। এ নিয়ে তখন যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং অর্থ ফেরত আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। নৈতিক দায় নিয়ে তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগও করেছিলেন। রহস্য উদঘাটনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠিত হয়, তারা যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। কিন্তু সরকার সেই প্রতিবেদন আজও প্রকাশ করেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ দেশের বাইরে থেকে অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা ‘হ্যাকড’ করে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা এ ক্ষতির জন্য ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে দায়ী করেছেন। ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকিং হ্যাকিংয়ের ঘটনার পরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলছে, তাদের ওখান থেকে হ্যাকিং হয়েছে-এর কোনো প্রমাণ নেই। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ ব্যাপারে খবর জানার পরই তারা সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করেছে। বেলজিয়ামভিত্তিক আন্তঃব্যাংক আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক সুইফট কর্তৃপক্ষও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। প্রেরণ ও গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে বার্তা বিনিময় হয়েছে, সেটি বিশ্বাসযোগ্য ছিল। সুইফট বলেছে, তাদের নেটওয়ার্ক অপব্যবহার হয়েছে- এ রকম কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
সরকারের একজন আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন এখানে সিস্টেমের কোন দোষ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকজনই এই চুরির সাথে জড়িত। এই কথা বলার অল্প সময়ের মধ্যেই ১৭ মার্চ ২০১৬ সরকার তাকে গুম করে এবং প্রায় এক সপ্তাহ তাকে গুম করে রাখা হয়। ২৪ তারিখ তাকে ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সে এ বিষয়ে আর কথা বলতে রাজি হয়নি। অপরদিকে সরকার রিজার্ভ লুটের সাথে জড়িতদের রক্ষা করার জন্য আজ পর্যন্ত কোন তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। কোন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এটিএম কার্ড জালিয়াতি:
বাংলাদেশে এটিএম কার্ড জালিয়াতি এর নতুন ঘটনার জন্ম দেয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে এটি ছিলো এক আলোচিত ঘটনা। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক জার্মান নাগরিক পিওতর সিজোফেন স্বীকারোক্তি দিলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল ব্যবসায়ী, কয়েকটি ব্যাংকের কার্ড শাখার কর্মী ও পুলিশ জড়িত বলে স্বীকার করেছেন এই মামলায় গ্রেফতারকৃত জার্মান নাগরিক পিওতর সিজোফেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁদের চক্রটি ‘স্কিমিং ডিভাইস” নামের বিশেষ যন্ত্র বসিয়ে গ্রাহকদের কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির মাধ্যমে ক্লোন কার্ড তৈরি করে টাকা তুলে নেয়।
এই জালিয়াতির টাকা চার ভাগ হতো। ‘পস মেশিন’ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মধ্যস্থতাকারীকে ভাগ দেয়ার পর বাকি টাকা পেতেন ভয়ঙ্কর প্রতারক বিদেশি নাগরিক পিওতর সিজোফেন মাজুরেক (ছদ্মনাম থমাস পিটার)। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে রিমান্ডে থাকা পিওতরের দাবি, সবাইকে ভাগ দেয়ার পর তার থাকত মাত্র ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে, ‘পস মেশিন’ সরবরাহ করা হতো এমন ২০টি প্রতিষ্ঠানের নামও জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত বেসরকারি তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয়। চক্রটি। টাকা হাতিয়ে নিতে তারা স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকদের গোপন তথ্য চুরি করে। এরপর ঘটনার শিকার ২১ জন সাধারণ গ্রাহক ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ইউসিবিএল, সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে টনক নড়ে।
সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেঙ্কারি:
দেশে হলমার্ক কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত ঘটনায় ব্যাংকের টাকা লুটপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের মধ্য সময় জুড়ে। ঐসময় সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে। যায়। এই ঘটনায় গঠিত কমিটির রিপোর্ট থেকে জানা যায়, অখ্যাত হলমার্ক গ্রুপ কেবল সোনালী ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। রিপোর্টে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ২০১০-২০১২ সময়ে মোট ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপ। একাই আত্মসাৎ করে দুই হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ হলমার্ক গ্রুপকে ঋণ পেতে
ও আত্মসাৎ করতে সহায়তা করেছে এমন প্রমাণ মিলেছে। দেশের বৃহত্তম এই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থ সংক্ষণে না করে লুটপাট করেছে।
জনতা ব্যাংকের কেলেঙ্কারি:
ভয়ংকর রকম উদারভাবে ঋণ বিতরণ করেছে জনতা ব্যাংক। এক গ্রাহককেই মাত্র ৬ বছরে তারা দিয়েছে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা। নিয়মনীতি না মেনে এভাবে ঋণ দেওয়ায় বিপদে ব্যাংক, গ্রাহকও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। জনতা ব্যাংকের মোট মূলধন ২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সুযোগ আছে। অর্থাৎ এক গ্রাহক ৭৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পেতে পারেন না। দেওয়া হয়েছে মোট মূলধনের প্রায় দ্বিগুণ। ব্যাংক দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের, সরকারের নিয়োগ দেওয়া সেই পরিচালনা পর্ষদই এই বিপজ্জনক কাজটি করেছে। এটি একক ঋণের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাতের আমলে এই অর্থ দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। এ সময় ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক নাগিবুল ইসলাম ওরফে দীপু, টাঙ্গাইলের কালিহাতী আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবলীগ নেতা আবু নাসের প্রমুখ। অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানেও জানা যাচ্ছে, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে জনতা ব্যাংকের এই পর্ষদের উৎসাহই ছিল বেশি। পর্ষদের সিদ্ধান্তে বারবার ঋণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। খেয়ালখুশিমতো।
ব্যাংকের উদার আনুকূল্য পাওয়া এই গ্রাহক হচ্ছে এননটেক্স গ্রুপ। এর পেছনের মূল ব্যক্তি হচ্ছেন মো. ইউনুস (বাদল)। তিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। তিনি ছিলেন গাড়ি চোর। গাড়ি চোর থেকে আওয়ামী নেতাদের আনুকূল্য পেয়ে তিনি এখন বড় ব্যবসায়িতে পরিণত হয়েছেন। তাঁরই স্বার্থসংশ্লিষ্ট ২২ প্রতিষ্ঠানের নামে সব ঋণ নেওয়া হয়। তাঁর মূল ব্যবসা বস্ত্র উৎপাদন ও পোশাক রপ্তানি। অধ্যাপক আবুল বারকাত প্রথম আলোকে বললেন, ‘তাঁর (ইউনুস বাদল) প্রতিষ্ঠানগুলো তো খুবই ভালো। পরিশোধেও ঠিক আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিপত্র এক ব্যক্তির নামে না। এ কারণেই এত ঋণ পেয়েছে।
ঋণ প্রদান করে দেশের টাকা অর্থ আত্মসাৎ করার ক্ষেত্রে জনতা ব্যাংক বরাবরই দুর্দান্ত। এই কেলেঙ্কারির আগে বিসমিল্লাহ গ্রুপ তাদের বিভিন্ন শাখা থেকে ১২০০ কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে। এই নিয়ে মামলায় নয় জনের কারাদণ্ড হলেও টাকা ফেরত আনা আজও সম্ভব হয়নি।
এরপরও থেমে থাকেনি জনতা ব্যাংক। এরপর ভুয়া রপ্তানি নথিপত্র তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। আগেরবারের কেলাঙ্কারির পর সরকার নগদ সহায়তা করে জনতা ব্যাংককে। সেই তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা জনতা ব্যাংক তুলে দিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপকে।
অপকর্মে সহায়তা করার পাশাপাশি ক্রিসেন্ট গ্রুপকে অর্থায়নও করেছে জনতা ব্যাংক। ক্রিসেন্টের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। বিদেশে রপ্তানির ১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রুপটি সরকারি ব্যাংক ও সরকারের তহবিল থেকে মাত্র পাঁচ বছরেই নিয়ে নিয়েছে ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আবুল আমাল আব্দুল মুহিত বলেন আবুল বারাকাত জনতা ব্যাংককে ধ্বংস করে দিয়েছে।
বেসিক ব্যাংক জালিয়াতি:
এক সময়ের আদর্শ ব্যাংক বলে খ্যাত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক এখন দেউলিয়ার পথে। ব্যাংকটি থেকে গত ৮ বছরে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির নামে আট হাজার কোটিরও বেশি টাকা পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে বার বার জনগণের করের টাকা দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গত জুন মাসে ব্যাংকটিকে মূলধন। ঘাটতি পূরণে একহাজার কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। আর গত ৪ বছরে বেসিক ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটির ৬৮টি শাখার মধ্যে ২১টিই লোকসান গুনছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর আমলের চার বছরে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়। ২০১৪ সালের পর থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে আরও প্রায় চার হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই ব্যাংকটির অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো খেলাপি ঋণের উচ্চহার। বর্তমানে ব্যাংকটির ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশই খেলাপি ঋণ। ব্যাংকটির এখন খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মাজিদ বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া হয়। আমরা তাদের অনেককে খুঁজে পাইনি। যেসব গ্রাহককে আমরা ধরে এনেছিলাম, তারাও ঋণের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। তিনি উল্লেখ করেন, সব টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় আমরা সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ রিসিডিউল করেছিলাম, কিন্তু দেখা গেল, সেখানকার তিন হাজার কোটি টাকাও চলে গেছে। এ জন্য টাকা উদ্ধারে অন্য কোনও পথ বের করতে হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি গত বছরে ৬৮৪ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। সব মিলিয়ে গত চার বছরে বেসিক ব্যাংকের নিট লোকসান হয়েছে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৯ সালেও প্রায় ৬৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়। পরের বছর ২০১৩ সাল থেকে লোকসান শুরু হয়। ২০১৩ সালে ৫৩ কোটি, ২০১৪ সালে ১১০ কোটি, ২০১৫ সালে ৩১৪ কোটি ও ২০১৬ সালে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা নিট লোকসান করে বেসিক ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত মার্চ শেষে ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩০৭ কোটি। এছাড়া ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। যদিও গত পাঁচ অর্থবছরে বেসিক ব্যাংকে ৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একদিকে বেসিক ব্যাংক ঋণ দেয়ার নাম করে টাকা লুটপাট করে খাচ্ছে। অন্যদিকে সরকার জনগণের টাকা আবার তাদের দিচ্ছে লুটপাট করার জন্য।
দেউলিয়া ফারমার্স ব্যাংক:
২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া নয়টি ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। কার্যক্রম শুরুর বছর না পেরোতেই বড় অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। দুর্বল হতে থাকে ব্যাংকের অবস্থা। একের পর এক অর্থ আত্মসাৎ শুরু করে পরিচালকেরা। তাতে আস্থার সংকট দেখা দেওয়ায় আমানতকারীরা অর্থ তোলা শুরু করেন। পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে গত ২৭ নভেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতী। এমনকি পরিচালক পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তাঁরা। এরপর ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার দায়ে ১৯ ডিসেম্বর ব্যাংকটির এমডি এ কে এম শামীমকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত আছেন আওয়ামী ঘরানার লেখক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন ও ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি নাজমুল আলম সিদ্দিকী।
সংকটে পড়া ফারমার্স ব্যাংক ২০১৭ সালে ৫৩ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত কমে হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির ঋণ ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।
এখন ব্যাংকটিতে জমা রাখা অর্থ তুলতে গিয়ে আমানতকারীদের বেশির ভাগকেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়েও টাকা পাচ্ছেন না। এতে পুরো ব্যাংক খাতে একধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। একের পর এক শাখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছে না। এর মধ্যে একজন চাকুরীহারা ব্যাংক কর্মকর্তা ও ইনভেস্টর আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীনের সন্তান।
এনআরবি কমার্শিয়ালে দুর্নীতি:
ফারমার্স ব্যাংকের সাথে একই সময়ে নতুন ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পাওয়া এ ব্যাংকটিতেও ঘটে গুরুতর ঋণ অনিয়ম। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ৭০১ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম খুঁজে পায়। অনিয়ম হয়েছে ব্যাংকটির মূলধন সংগ্রহেও। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর পরিবর্তন আসে ব্যাংকটির পরিচালনায়। প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ফরাছত আলীকে সরিয়ে দায়িত্বে আসেন তমাল এস এম পারভেজ। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যানকেও সরানো হয়। ছুটিতে পাঠানো হয় এমডি দেওয়ান মুজিবর রহমানকে।
দখল হয়ে যাওয়া ব্যাংক:
এই সরকারের আমলে ফিল্মী স্টাইলে দখল হয়ে যায় কয়েকটি ব্যাংক। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং প্রথমেই দখল করা হয়। এছাড়াও এসআইবিএল, কমার্স ব্যাংক, এবি ব্যাংক এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দখল করে নেয় এস আলম গ্রুপ।
জামায়াতে ইসলামীর ব্যাংক বলে পরিচিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যাংক। এর আমানত, ইনভেস্টমেন্ট এবং নিট লাভ সবচেয়ে বেশী। বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গ্রাহক এই ব্যাংকের। বহুদিন ধরেই এই ব্যাংকটিকে কঠোর নজরদারীতে রাখে। অবশেষে নজিরবিহীন ক্যু করে সরকার দখল করে নেয় ইসলামী ব্যাংককে। অস্ত্রের মুখে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে বাধ্য করা হয় পদত্যাগ করতে। কীভাবে সরকার ইসলামী ব্যাংক দখল করে নিয়েছে এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। লন্ডন ভিত্তিক বিখ্যাত সাপ্তাহিকী দ্য ইকনোমিষ্ট। তারা “The government initiates a coup at Bangladesh’s biggest bank” শিরোনামে ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ইকনোমিস্ট লিখেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ৫ জানুয়ারী ২০১৭ সকালে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান আর এমডিকে ফোন করে। প্রথমে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে ডিজিএফআই সদর দপ্তর ঢাকা ক্যান্টমেন্টে নিয়ে আসা হয়। সেখানে একজন গোয়েন্দা কর্তা তাদের পদত্যাগ পত্র এগিয়ে দিয়ে। তাতে স্বাক্ষর করতে বলেন। বাধ্য হয়ে তারা পত্রে স্বাক্ষর করে চলে আসেন।
এরপর গোয়েন্দা কর্তাদের উপস্থিতিতেই সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি হোটেলে সভা ডেকে নতুন পরিষদ গঠন করা হয়।পত্রিকাটি আরো লিখেছে, সরকার মূলত বহুদিন থেকেই ব্যাংকটি দখল করতে চেষ্টা করছিলো। ব্যাংক
দখলে এটির মূল শেয়ার যাদের সেই ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবিকে অন্ধকারে রাখা হয়। আইডিবি অভিযোগে করেছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে নিয়ম নীতির বালাই ছিলো না, তাদেরও জানানো হয়নি। মাত্র তিন দিন আগে বৈঠকের খবর দেয়া হয়। ফলে তাদের পক্ষে যোগদান সম্ভব হয় নি।
ইসলামী ব্যাংকের মতোই সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। পুনর্গঠন করা হয়েছে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ইসলামী ব্যাংকের স্টাইলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ড. রেজাউল হককে। পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শহিদ হোসেনকেও। এসআইবিএল-এর চেয়ারম্যান পদে নতুন নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ।
নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি কাজী ওসমান আলী। এছাড়া, ব্যাংকটির কার্যনির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান করা হয়েছে বেলাল আহমেদকে। তিনি এস আলম গ্রুপের একজন কর্মকর্তার আত্মীয়। এসআইবিএলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ৩০ অক্টোবর ২০১৭ সালে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এসআইবিএল-এর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই রদবদল আনা হয়। বৈঠকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান রেজাউল হক, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুল হক, এমডি শহীদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন না বা তাদের থাকতে দেয়া হয়নি। একই কায়দায় এস আলম গ্রুপ দখল করে নেয় কমার্স ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।
একদিকে ব্যাংক দখল, অন্য দিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিত্য নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে দলীয় ক্যাডারদের ধনকুবের বানানোর যে অশুভ কার্যক্রম চলছে তাতে গোটা অর্থনীতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা লুটেরা, টাউট বাটপার আর দলীয় ক্যাডারদের হাতে বন্দী হয়ে পড়ছে। এর আশু পরিণতি কখনো শুভকর হবার কথা নয়। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন আরো কয়েকটি ব্যাংককে নাকি সরকার লাইসেন্স দিচ্ছে। যে ব্যাংক বর্তমানে চালু আছে। সেগুলোর ঘাণি টানা যখন কষ্টকর হচ্ছে তার উপরে আবারো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়ে সরকার আসলে দেশের অর্থনীতিকে কোন দিকে নিয়ে যেতে চায়?
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা যেমন প্রতিদিন অর্থনীতি নিয়ে আশংকা প্রকাশ করছেন একইভাবে দেশের জনগণও দেশের অর্থনীতি নিয়ে চরমভাবে শংকিত। জনগণের এ শংকা কাটানোর জন্য বর্তমানে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে বলে মনে হয় না। জনগণের কাছে যাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই তারা এ সংকট কাটাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেবে না এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে সকল প্রকার অস্থিরতা, অন্যায়, দুর্নীতি এবং সীমাহীন লুটপাট বন্ধের আগে প্রয়োজন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণ। গণতন্ত্র নামক রেলগাড়িটিকে তার লাইন থেকে বিচ্যুৎ করার কারণেই আজ এ অবস্থা। তাই সর্বাগ্রে দরকার গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তির উপর স্থাপন।
অব্যাহত লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ জনগণ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানে এর দায় নিতে হয় জনগণকে। একের পর এক লুটপাট হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো। আর দফায় দফায় সেই ব্যাংকগুলোর ঘাটতি পুরণ হচ্ছে জনগণের টাকায় গঠিত রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে সকল জ্বালানী, বিদ্যুত, গ্যাসসহ সকল নাগরিক সুবিধার মূল্য বাড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিটি পণ্যে ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দুর্বিষহ হচ্ছে জনজীবন।