অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে আট দফা দাবী উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
২৩ অক্টোবর মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রদান করা এক বক্তব্যে দলের পক্ষ থেকে এই আট দফা দাবী উত্থাপন করেন।
বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভা আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত আটদফা দাবী উত্থাপন করে।
১. অবিলম্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকার গঠন করতে হবে।
২. অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন ও ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা চালুর ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের সকল নেতা-কর্মীকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি প্রদান ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. এখন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখতে হবে, নতুন করে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া বন্ধ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। কথিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালা-কানুন বাতিল করতে হবে।
৫. বিচারবিভাগের উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজাতে হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৬. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তাদের উপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৭. রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম হওয়া নাগরিকদের অবিলম্বে তাদের পরিবারের নিকট ফেরত দিতে হবে এবং গুম-খুনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
৮. আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে থেকে এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
দাবি পেশ করার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বাংলাদেশ আজ গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে প্রায় সকল দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ‘কেয়ারটেকার সরকার’ ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার অধীনে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদের তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ধারা শুরু হয়। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের পর সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার যে যাত্রা শুরু করে তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য ‘কেয়ারটেকার সরকার’ ব্যবস্থাটি বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। যার ফলশ্রুতিতে দেশে রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটার বিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এসে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। দেশে-বিদেশে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন ব্যাপকভাবে সমালোচিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সরকার জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পরিবর্তে জোর করে ক্ষমতায় বহাল থাকে।
তিনি বলেন, সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সরকার তার নীল-নকশা অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে হয়রানী করছে। মিথ্যা মামলা, গণ-গ্রেফতার চালানো হচ্ছে। এটা কোন অবস্থাতেই নির্বাচনের পরিবেশ নয়।
উল্লিখিত দাবীসমূহ বাস্তবায়ন করে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এই আটদফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতি, ধর্ম, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বানও জানানো হয় দলটির পক্ষ থেকে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক মো: তাসনিম আলম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রমুখ।