অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েকজন প্রবীণ রাজনীতিবিদের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য হতে যাচ্ছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর একটি সমাবেশের মাধ্যমে এ জাতীয় ঐক্যের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে।
দেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী যত রাজনৈতিক সংগঠন আছে সকলকেই তারা এই ঐক্যের অন্তর্ভূক্ত করবে। ‘বিতর্ক এড়াতে’ জামায়াতে ইসলামীকে ঐক্যের বাইরে রাখার কথা বলছেন ড. কামাল হোসেনসহ অন্যান্যরা।
তবে, নাম সর্বস্ব যুক্তফ্রন্ট নামের সংগঠনের সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরী জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে যেসব বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আর বি. চৌধুরী ও তার ছেলে হঠাৎ করেই জামায়াত বিরোধী হয়ে উঠলেন কেন? জনমনে এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। বি. চৌধুরী ও তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরীর বক্তৃতা বিবৃতি দেখে মনে হয় তারা জাতীয় ঐক্য করতে যাচ্ছেন জামায়াতের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে নয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ রাজনৈতিক মহলেও এনিয়ে কানাঘুষা চলছে যে, বি. চৌধুরী শেখ হাসিনার মতো এত দ্রুত অতীতকে ভুলে গেছেন! বি. চৌধুরী যখন বিএনপিতে ছিলেন তখন তার এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথায় ছিল? ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় জামায়াত কি স্বাধীনতা বিরোধী ছিল না? হঠাৎ করে তিনি হয়ে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আর জামায়াত হয়ে গেল স্বাধীনতা বিরোধী!
অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশে মূলত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা শুরু হয়েছে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর থেকে। স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর ৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। কিন্তু সরকার গঠন করার মতো যথেষ্ট ছিল না। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার স্বার্থে কোনো প্রকার শর্ত ছাড়াই সরকার গঠনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে সমর্থন করে। জামায়াতের সমর্থন নিয়েই সরকার গঠন করে বিএনপি। বি. চৌধুরী তখন বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু, তখনতো চৌধুরী সাহেব একবারও বলেন নি যে জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, তাদের সমর্থন নিয়ে আমরা সরকার গঠন করবো না।
তারপর, ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন থেকে দেশ, দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় গঠন হয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটের সমন্বয়ে চারদলীয় জোট। মূলত এই চারদলীয় জোট গঠনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন জামায়াতের তৎকালীন আমির অধ্যাপক গোলাম আযম। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আন্দোলনে মাঠে ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তখনতো বি. চৌধুরী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তখনতো তিনি কোনো আপত্তি করেন নি যে, জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী দল। তাদের সঙ্গে জোট করে আমরা আন্দোলন করবো না।
এরপর, ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে চারদলীয় জোটের ব্যানারে ৯৪,৪০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই নির্বাচনের সময় বি. চৌধুরীর পক্ষে জামায়াত-শিবিরও কাজ করেছিল। আর তাদের ভোটতো আছেই। কিন্তু, বি. চৌধুরী কিন্তু তখন একথা বলেন নি যে জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, তারা আমার পক্ষে কাজ করতে পারবে না। তাদের ভোট আমার দরকার নেই। নিজেদের স্বার্থের সময় জামায়াতও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হয়ে যায়। আর স্বার্থ ফুরালে জামায়াত হয়ে যায় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। এটাই হলো বি. চৌধুরীদের চরিত্র।