অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এটা এখন অনেকেই জানে যে গত ২৭ মে, রোববার বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সাধারন ক্ষমা পাওয়ার পরপরই তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
আসলে জেল থেকে নয়, তিনি ছাড়া পেয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। কেননা প্রশাসনের সাথে লবিং এর জোরে জোসেফ অনেকদিন থেকেই মিথ্যা অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেখিয়ে কারাগারে না থেকে হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন।
এই প্রসংগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাংগীর কবিরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা জোসেফকে মুক্তি দেয়ার সরকারী আদেশ রোববারেই পেয়েছেন এবং এরপরই তারা তাকে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানিয়েছেন তারা সকল আইনানুগ প্রক্রিয়া মেনেই জোসেফকে মুক্তি দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এই প্রসংগে আরো জানান, জোসেফ প্রায় ২০ বছর ধরে জেলে আছেন। প্রেসিডেন্ট তাকে ক্ষমা করেছেন কেননা তার দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
জানা যায়, জোসেফ একটি খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৩০ বছরের জেল খাটছিলেন। এরপর আরো একটি অস্ত্র মামলায় তার আরো ১২ বছর জেলে থাকার কথা।
তবে এগুলো সবই আসলে কথার কথা। মূল কথা হচ্ছেন জোসেফ ছাড়া পেয়েছেন তার বড় ভাই আজীজ আহমেদের লবিংয়ে। আজীজ আহমেদ একজন লেফটেনেন্ট জেনারেল যিনি বর্তমানে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে কর্মরত আছেন। সেনাবাহিনীতে ভারত ঘেষা এই কর্মকর্তা বিডিআর বিদ্রোহের পর পুনর্গঠিত বিজিবির প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এই বিদ্রোহের পর সবচেয়ে বেশী সময় অর্থাৎ ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজিবির মহাপরিচালক ছিলেন। তার পরামর্শেই বিডিআর বিদ্রোহ মামলাগুলো সরকার ভিন্নখাতে নিয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। আজীজ আহমেদ বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মাদ শফিউল হকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর (আগামী ২৫ জুন তার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে) পরবর্তী সেনাপ্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। ভারত ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার আগামীতে সেনাপ্রধান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী দেখছেন বিশ্লেষকরা।
জোসেফের আরেক ভাই হলেন হারিস আহমেদ। তিনিও একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তাদের আরেক ভাই হলেন সাইদ আহমেদ যিনিও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত এবং ১৯৯০ সালে প্রতিপক্ষের গুলিতে তিনি নিহত হন।
ছাড়া পেয়েই জোসেফ দেশ ছেড়েছেন এবং প্রাথমিকভাবে তিনি মালয়েশিয়ায় আছেন বলে জানা গেছে। মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত জোসেফের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা বিচারাধীন ছিল। জোসেফকে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে হওয়া এই হত্যায় জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমান থাকায় ঢাকার জজ কোর্ট জোসেফকে ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। এছাড়া একই হত্যা মামলায় তার ভাই হারিস আহমেদ, কবির সরকার এবং আনিস আহমেদ নামের অপর তিন ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে আদালত।
২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট জোসেফের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। কিন্তু ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আপীল বিভাগ জোসেফের মৃত্যুদণ্ডকে হ্রাস করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। তখন থেকেই জোসেফ বন্দী থাকলেও বেশীরভাগ সময়েই সে তার বড় ভাইয়ের লবিংয়ের কল্যানে পিজি হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনেই চিকিৎসাধীন ছিল। আর এবার তো বড় ভাই তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তাকে দেশ থেকেই বের করে দিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যেদেশে অসুস্থ হওয়ার পরও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, ৭৩ বছরের এক বিধবা নারীকে একের পর এক মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়, উচ্চ আদালত জামিন দিলেও নিম্ন আদালত নানা অযুহাতে অন্য মামলায় জামিন ঝুলিয়ে রাখে, কিংবা যেদেশে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন কাউন্সিলরকে গুলি করে হত্যা করা হয় সেই দেশে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে মুক্তি পাওয়া হয়তো খুব অসম্ভব কিছু নয়।