অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর নৃশংস ও বর্বরোচিত কায়দায় হত্যা-নির্যাতন ও আগুন দিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম প্রাণ ভয়ে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে এখন সব চেয়ে আলোচনার বিষয় হলো রোহিঙ্গা ইস্যু। দলমত নির্বিশেষে সকলেই অসহায় রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ব্যক্তিগতভাবে ও সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছে।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও ত্রাণ কমিটি গঠন করে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করছে ও ত্রাণ বিতরণ করছে।
এদিকে, প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে সরকার রাজি না হলেও দেশি ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং ত্রাণও বিতরণ করেছেন। পরের দিন বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আবার উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
প্রথমে আওয়ামী লীগের নেতারাও ভারতের সাথে সুর মিলিয়ে রোঙ্গিাদেরকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছে। বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতারাও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তৎপর হয়ে উঠে। সবাই মিলে এক সাথে প্রচার চালাচ্ছে যে শেখ হাসিনাই বর্তমান বিশ্বে একমাত্র মানবিক ও শান্তির নেত্রী। তাদের ভাষায় শেখ হাসিনার মানবিকতা এখন উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে।
এখনও পর্যন্ত অসহায় রোহিঙ্গাদের মাঝে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা নিয়ে না গেলেও প্রচারে তারা সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে তারা দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে বলেই মনে হচ্ছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন যে, একটি নোবেলের জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনাকে ফলাও করে প্রচার করছে।
অপরদিকে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে বিএনপি ত্রাণ বিতরণের চেষ্টা করেও সরকারের বাধার কারণে পারেনি। গত বুধবার রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ে যাওয়া বিএনপির ২২ ট্রাক ত্রাণ আটকে দিয়েছে সরকার। ত্রাণবোঝাই ট্রাকগুলোর চাবিও নিয়ে গেছে পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার ত্রাণগুলো ট্রাক থেকে নামিয়ে কক্সবাজার জেলা বিএনপির কার্যালয়ে রাখা হয়।
কী কারণে বিএনপিকে ত্রাণ বিতরণ করতে দেয়া হচ্ছে না সেই বিষষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
শরণার্থী রোহিঙ্গাদের মাঝে বিএনপিকে ত্রাণ বিতরণ করতে না দেয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। দেশের প্রধান বিরোধীদলের ত্রাণ বিতরণে বাধার ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন বিশিষ্টজনেরাও।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বিএনপির গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার হরণ করে প্রধানমন্ত্রী কেমন মানবিকতা দেখাচ্ছেন? কোনো ব্যক্তি বা দলের মৌলিক অধিকার হরণও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
কেউ কেউ বলছেন, মিয়ানমারের নেত্রী সুচির মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিএনপিকে ত্রাণ বিতরণ করতে না দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন। মানুষের অধিকার হরণ করে মানবিকতা প্রকাশ করা যায় না। মিয়ানমার বাহিনী আর শেখ হাসিনার বাহিনীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
Discussion about this post