৩৬ ঘণ্টা পরে মুক্ত হলেন দেশ বরেণ্য কবি, লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের পর আদালত তাকে নিজ জিম্মায় দিলে তিনি চিকিৎসার জন্য বারডেম হাসপাতালে যান। রাতে সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার ভোরে বাসা থেকে বের হওয়ার পরে তাকে অপহরণ করা হয়। পরে যশোরের নওয়াপাড়া থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সোমবার রাতে তাকে উদ্ধার করে।
আজ মঙ্গলবার সকালে তাকে ঢাকায় আনা হয়। পরে তাকে নেয়া হয় মিন্টো রোডস্থ ডিবি কার্যালয়ে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুরের পর আদালতে নেয়া হয়।
আদালতে ফরহাদ মজহার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এর আগে পুলিশকে তিনি বলেছেন, তাকে চোখ বেঁধে অপহরণ করা হয়েছিলো।
এদিকে, সকালে তাকে থানায় আনা হলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মেয়ে ও স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদেন ফরহাদ মজহার।
এসময় তিনি তার স্ত্রীকে বলেন, ‘আমি সাংঘাতিক ট্রমাটাইজড’।
সোমবার রাতে র্যাব-৬ নওয়াপাড়া থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে। পরে তাকে আদাবর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) হাফিজ আল ফারুকের নেতৃত্বে তাকে যশোর থেকে ঢাকায় আনা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল যশোর থেকে একটি মাইক্রোবাসে (গাড়ি নম্বর- ঢাকা মেট্রো চ ১৩৪১৩১) করে তাকে নিয়ে সকাল পৌনে ৯টার দিকে আদাবর থানায় পৌঁছায়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তাকে নেয়া হয় মিন্টো রোডস্থ ডিবি কার্যালয়ে। সেখানেও পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
আদালতে জবানবন্দি
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় ফরহাদ মজহারকে জবানবন্দি শেষে নিজ জিম্মায় যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত।
আজ আদাবর থানায় দায়ের করা অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় কলামিস্ট কবি ফরহাদ মজহারকে বিশেষ পুলিশী প্রহরার মাধ্যমে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মর্কতা।
আদালত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার জবানবন্দি ভিকটিম হিসেবে রেকর্ড করার জন্য ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবিবকে দায়িত্ব দেন।
বেলা ২টা ৪৯ মিনিটে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করে।
জবানবন্দি শেষে তার আইনজীবীগণ আদালতে ভিকটিম ফরহাদ মজহারকে নিজ জিম্মায় দেয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।
বেলা ৪টা ৪১ মিনিটে আদালত এজলাসে ওঠানো হয় ফরহাদ মজহারকে।
তাকে এজলাসের সামনে পুলিশের মাধ্যমে হাজির করে আদালতকে আইনজীবী বলেন, ভিকটিম যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা সবার সামনে পড়ে শুনালে আমরা জানতে পারতাম কি বলেছেন।
আদালত বলেন- এটা সম্ভব নয়। এ জবানবন্দি গোপন তা সবার সামনে তুলে ধরা যাবে না।
এ অবস্থায় আদালত ভিকটিমের কাছে জানতে চান তিনি নিজ জিম্মায় যাবেন কি-না।
উত্তরে ফরহাদ মজহার বলেন, আমি যাবো।
তখন আদালত অনুমতি দেন।
সাথে সাথে আদালতে অবস্থানরত বিশেষ পুলিশ ফরহাদ মজহারকে খাস কামড়ায় নিয়ে যায়। পরে সিনিয়র এডিসি মিরাশ উদ্দিন তাকে বিশেষ পুলিশ প্রহরায় গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এসময় তার স্ত্রী ও মেয়ে তার সাথে গাড়িতে ছিলেন না। একজন আত্মীয়কে গাড়িতে তার সাথে যেতে দেখা যায়। তাকে নিয়ে দ্রুত গাড়ি চলে যায়।
শুনানির সময় ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তার ও মেয়ে সমতলি হকসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ভিকটিমের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সৈয়দ জয়নাল আবদীন মেজবাহ, জিয়া উদ্দিন জিয়া, নূরুজ্জামান তপন, আব্দুল খালেক মিলনসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার রাতে স্ত্রী ফরিদা আক্তার বাদী হয়ে আদাবর থানায় অপহরণ মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং- ০৪। এর আগে তিনি জিডি করেছিলেন। জিডি নং- ১০১।
বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ফরহাদ মজহার
এদিকে, রাত ৮টার দিকে জানা যায়, ফরহাদ মজাহারকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আদালত থেকে সোজা তাকে বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিক রোগে ভুগছেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post