মুন্সীগঞ্জে সদর উপজেলার মুক্তারপুরে বিএনপি’র কর্মসূচিতে আওয়ামী পুলিশ বাধা দিতে চাইলে জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এসময় নিরস্ত্র মানুষকে পুলিশ গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
আহতদের অনেককে মুন্সীগঞ্জে জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গুরুতর আহদের মুন্সীগঞ্জে সদল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩ টার দিকে মুক্তারপুরের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ২ জন নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ কারো মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি’র কর্মসূচিতে আওয়ামী পুলিশ বাধা দিতে চাইলে প্রথমে তারা প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় বেতনভুক্ত পুলিশ নিরস্ত্র জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এই গুলি জনগণের টাকায়ই কেনা হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তার জন্য কেনা গুলি ফ্যাসিবাদকে রক্ষা করতে জনতার দিকে ছুড়েছে আওয়ামী পুলিশ। এতে প্রায় ঘন্টাব্যাপি পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এসময় দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক কাজী সাব্বির আহম্মেদ দীপু, কালবেলার প্রতিবেদক মো: রুবেল, দিনকালের প্রতিবেদক গোলজার হোসেন, রজত রেখার প্রতিবেদক নাজির হোসেন এবং বিএনপির নেতা-কর্মীসহ কমপক্ষে দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হবার খবর পাওয়া গেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে মুক্তারপুরের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় বিএনপির পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানারসহ মিছিল নিয়ে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরি ঘাট এলাকায় কর্মসূচির জন্য নির্ধারিত স্থানে জড়ো হতে থাকেন। এসময় প্রথমে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয় এবং মিছিলের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে।
এ অবস্থায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এগোতে চাইলে পুলিশ অতর্কিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধা দেয় এবং লাঠিচার্জ শুরু করে। আওয়ামী পুলিশের এই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় জনতাও যোগ দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। পুলিশের গুলি ও টিয়ারশ্যালের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য জনতা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারতে থাকেন।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মাথায় গুলিবিদ্ধ মারাত্মক আহত একজন প্রতিবাদকারীকে কয়েকজন মানুষ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, বরাবরের মতোই নিজেদের দোষ ঢাকতে বিএনপির কর্মীদের ওপর সংঘর্ষের দায় চাপানোর চেষ্টা করেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সেই বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ প্রশাসন উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করি। লাঠিচার্জেও নিয়ন্ত্রণ না এলে এক পর্যায়ে টিয়ারশ্যাল গ্যাস নিক্ষেপ করেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে ৩০-৩৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবী করেন ওসি।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ সেক্টরে সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এবং জন সম্পৃক্ত নানান ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে গত ২২শে আগস্ট থেকে পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে বিএনপির ৩ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। একইসঙ্গে এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশি হামলায় ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এছাড়া, ১৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমাবেশে আওয়ামী লীগের গুণ্ডাদের হামলায় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ শতাধিক কর্মী আহত হয়েছেন। দলবাজ পুলিশের অব্যর্থ নিশানায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চিরতরে পঙ্গুত্বের আশঙ্কায় রয়েছেন বিএনপির অনেক কর্মী।
সবশেষ গত ১৭ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানীতে বিএনপির কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় আহত হয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমা রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। একই দিন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহর (বুলু) ওপর হামলা করেছে জঙ্গি আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে ঢাকায় আনা হয়েছে।
জনরোষ থেকে বাঁচতে গত এক যুগে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশগুলোতে পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাশাপাশি হেলমেট পরিহিত সরকারের ভয়াবহ এক গুপ্ত বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন সময় হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া, ক্রসফায়ার গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বিরোধী দল ও মতের লোকদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশব্যাপী সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন জেলায় প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে।
সূত্র: আমার দেশ
Discussion about this post