অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
লুটপাট-দুর্নীতি আর বিদেশের পাচারের মাধ্যমে বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে আরও কয়েক বছর আগেই। আর পালিত দলীয় ব্যবসায়ীদের দিয়ে শেষ করে দিয়েছে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে বর্তমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও আইএমএফের মতে-খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ কোটি টাকা হবে। যে টাকা আর কখনো ফিরে আসার সম্ভাবনা নাই। ইতিমধ্যে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে। সদ্য বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংসের জন্য যা যা করার দরকার ছিল সবই তিনি করে গেছেন। আর সবই তিনি করেছেন সরকারের নির্দেশে।
তবে বিশিষ্টজনদের ধারণা ছিল-নতুন গভর্নর এসে হয়তো ব্যাংকিং সেক্টরকে এই দুর্দশা থেকে উদ্ধার করতে পারবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। শেখ হাসিনা তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য অনগত কামলা হিসেবে পরিচিত আব্দুর রউফ তালুকদারকে গভর্নরের চেয়ারে বসিয়েছেন। আর আব্দুর রউফ তালুকদার চেয়ারে বসেই নতুন এক নির্দেশনা জারি করেছেন যা ভেঙ্গে পড়া ব্যাংকিং সেক্টরের এখন মৃত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগদান করার পাঁচ কার্যদিবসের দিন খেলাপি ঋণ ঠেকানোর নামে ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশাল ছাড় দিয়ে নীতিমালা জারি করেছে। এখন ঋণ আদায় না হলেও কমবে খেলাপি। এতে করে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা।
নতুন নীতিমালার ফলে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি এসব ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধ করা যাবে। আগে এসব ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো।
আব্দুর রউফ তালুকদার সবচেয়ে বড় যে আত্মঘাতী কাজটা করেছেন সেটা হল- খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পুরো ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এর ফলে ব্যাংক মালিকেরাই ঠিক করবেন, কী সুবিধা পাবেন ঋণখেলাপিরা। আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগত। যা স্বয়ং গভর্নর অনুমোদন করতেন। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে সেই ক্ষমতার পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দিয়েছেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, নতুন নীতিমালার ফলে ব্যাংকের ঋণ আদায় আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এর ফলে তারল্য ব্যবস্থাপনায় হযবরল পরিস্থিতি দেখা দেবে। এতে বাড়াতে হবে আমানতের সুদ। আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। নতুন ঋণ বিতরণ মন্থর হয়ে পড়বে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর হাতে ক্ষমতা দেওয়ায় অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে।
আগে যেকোনো পরিমাণ মেয়াদি খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ এককালীন অর্থ জমা দিতে হতো। এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই হবে। আগে চলমান ও তলবি খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ এককালীন অর্থ জমা দিতে হতো, এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে।
আগের নিয়মে খেলাপি মেয়াদি ঋণ নিয়মিত হলে তা পরিশোধে ৯ থেকে ২৪ মাস সময় দেওয়া হতো। নতুন নীতিমালায় ১০০ কোটি টাকার কম ঋণে ৬ বছর, ৫০০ কোটি টাকার কম ঋণে ৭ বছর ও ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পরিশোধে ৮ বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া যাবে।
আগে চলমান ও তলবি ঋণ নিয়মিত হলে তা পরিশোধ করতে ৬ থেকে ১৮ মাস সময় দেওয়া হতো। এখন ৫০ কোটি টাকার কম ঋণ পরিশোধে ৫ বছর, ৩০০ কোটি টাকার কম পরিশোধে ৬ বছর ও ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণে ৭ বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া যাবে।
পুরনো আইনে খেলাপিরা বকেয়া পরিশোধের আগে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। কিন্তু বর্তমান আইনে বিশেষ সুবিধা নিয়ে যেসব খেলাপি গ্রাহক নিয়মিত হয়েছেন, তাঁরা ব্যাংক থেকে আবারও ঋণ নিতে পারবেন।
Discussion about this post