লেনিন শুভ্র
দেশের দুর্নীতি-লুটপাট, খুন-হত্যা, কথিত ক্রসফায়ার, নারী নির্যাতন-ধর্ষণ দিন দিন বেড়ে চললেও তাতে মন না দিয়ে ক্ষমতাসীনদের সাথে তাল মিলিয়ে কিছু কথিত সংগঠন ও মানুষের একমাত্র চোখের কাটা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
এতদিন শুধু ক্ষমতাসীন দল ও বামপন্থীদের চোখের কাটা হলেও বর্তমানে জাতীয়তাবাদী কিংবা কথিত ইসলামপন্থীরা বিদ্বেষ ছড়িয়ে চলছে।
যারা ধর্মনিরপেক্ষতা নামের ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী, যারা নষ্ট কমিউনিস্টদের নীতি আদর্শে বিশ্বাসী তাদের কাছে জামায়াত হলো-জঙ্গি আর সন্ত্রাসী সংগঠন। আর ইসলামের লেবাস গায়ে লাগিয়ে যারা মুখে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে আর স্বার্থের জন্য গোপনে বামপন্থী ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সাথে সম্পর্ক রাখে তাদের দৃষ্টিতে জামায়াত হল ভ্রান্ত আকীদার দল। জামায়াত কোনো ইসলামী দল না। ইসলামের নাম ব্যবহার করে তারা রাজনীতি করছে।
মোট কথা-জামায়াতের বিরুদ্ধে বামপন্থী ও কথিত ইসলামপন্থীদের সুর একই। তারা একই সুরে কথা বলে।
জামায়াতে ইসলামী এদেশে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে একটি ন্যায়-ইনসাফ ভিত্তিক সুখী ও সমৃদ্ধশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারসহ সকল প্রকার অধিকার আদায়ে জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে।
বিশেষ করে এদেশে যারাই যখন আল্লাহ, রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম, কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামী আদর্শ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নিয়ে কটূক্তি করেছে বা গালি দিয়েছে, সর্বপ্রথমই এর প্রতিবাদ করছে জামায়াতে ইসলামী। ইসলাম বিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী দেশবাসীকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে। এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্যা নেতাকর্মী কারাবন্দী হয়েছেন। অনেকে জীবনও দিয়েছেন।
এরপরও, সরকারের দালাল হিসেবে পরিচিত ধর্মব্যবসায়ী চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করিমরা বলছেন-জামায়াত নাকি ইসলামকে ব্যবহার করে রাজনীতি করছে।
গত রোববার একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে চরমোনাই পীর বলেছেন, ইসলামের যে আদর্শ আছে সেখান থেকে অনেকটাই সরে গিয়ে জামায়াত রাজনীতি করছে। আমরা যেটা মনে করি, জামায়াতের কার্যক্রমে যা প্রকাশ পায় তা হল- ক্ষমতাই তাদের কাছে প্রধান। তারা শুধু ইসলামকে ব্যবহার করে রাজনীতি করছে।
চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজা্উল করিমকে নিয়ে খুব বেশি লেখার নেই। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, এদেশের অন্যান্য ইসলামপন্থীরাও তিনি ও তার দলকে এখন ধর্মব্যবসায়ী হিসেবে মনে করে। দিন প্রতিষ্ঠার আড়ালে তিনি মূলত তার পীর ব্যবসাকে টিকিয়ে রেখেছেন। আর এই পীর ব্যবসাকে ধরে রাখতে তিনি তলে তলে সরকারের দালালী করে যাচ্ছেন। জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলার অর্থই হলো-সরকারকে খুশী রাখা। এদেশের সকল ইসলামী দল ও আলেম-সমাজ চরমোনাই পীরকে সরকারের দালাল হিসেবেই মনে করে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো-তার বাবা সৈয়দ ফজলুল করিমও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জামায়াতের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে গেছেন। বিশেষ করে নির্বাচন আসলেই তিনি ফতোয়ার ঝুলি নিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে মাঠে নামতেন। তবে, মজার বিষয় ছিল-তিনি জামায়াতকে যত গালি দিতেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে যত বেশি ফতোয়া দিতেন, লোকজন ততই জামায়াতের কাছে আসতো। তার গালাগালি শুনে জামায়াতকে বুঝার জন্য মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হতো। এমনকি আওয়ামী লীগসহ সাধারণ মানুষকেও তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে উস্কে দিতেন। তিনি দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, কিন্তু জামায়াতে ইসলামী শেষ হয়ে যায়নি, এখনো আছে।
সৈয়দ রেজাউল করিমও তার বাবার মতো শুরু করেছেন। দেশে হাজারো সমস্যা থাকতেও তিনি কথা বলছেন জামায়াতকে নিয়ে। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো-এদেশের সবচেয়ে বৃহত্তর ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি নাকি ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে জোট করার চেষ্টা করছেন।