অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত সপ্তাহে আওয়ামী রাজাকারদের তালিকা প্রকা্শের পরই অ্যানালাইসিস বিডির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, মান সম্মান বাঁচাতে শেখ হাসিনা যেকোনো সময় এটা প্রত্যাহার করে নিবে।
অবশেষে তাই হলো। ৭১ সালে পাকিস্তানের ভাতা প্রাপ্ত দালাল পরবর্তীতে যারা কথিত মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে সেই সব দালালদের সম্মান রক্ষায় শেখ হাসিনা রাজাকারের তালিকাটি প্রত্যাহার করেছে। মজার বিষয় হলো-ক্ষণিকের জন্য হলেও এদেশের মানুষ স্বাধীনতার কথিত দাবিদার নামে আওয়ামী রাজাকারদের চেহারাটা দেখতে পেয়েছে। সরকার প্রত্যাহার করলেও আসল রাজাকারের চেহারাগুলো কিন্তু মানুষের মানসপটে গেঁথে গেছে।
গত বুধবার আওয়ামী রাজাকারদের তালিকাটা প্রত্যাহারের পর শেখ হাসিনা বলেছেন-এটা কোনোভাবেই রাজাকারের তালিকা হতে পারে না। রাজাকারের তালিকায় কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম আসতে পারে না। কিন্তু তারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেছেন, এটা সেই সব দালালদের তালিকা, ৭২ সালের পর যাদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা করা হয়েছিল। এই তালিকার লোকজন দালাল আইনে অভিযুক্ত হয়েছিলও বলে জানান মন্ত্রী।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমান নামধারী মুক্তিযোদ্ধারা কি আসলে দালাল ছিলো?
সরকারের মন্ত্রীরাই বার বার বলেছেন, পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে তারা যে তালিকা পেয়েছেন সেটাই হুবহু প্রকাশ করেছেন। তাহলে সরকারের বক্তব্য অনুযায়ই এই তালিকার সবাই পাকিস্তানের দালাল ছিল। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সময় কারা কারা পাকিস্তানিদেরকে সহযোগিতা করেছিল সেটাই বাঙ্গালীদের চেয়ে পাকিস্তানিরাই ভাল জানতেন। যারা তাদেরকে সহযোগিতা করেছিল তাদেরকে তারা নিয়মিত ভাতা দিতেন। বাঙ্গালী সহযোগিদের নামের তালিকাও ছিল তাদের কাছে। ৭২ সালে সেই তালিকাই বাংলাদেশকে দিয়েছিল পাকিস্তান। এই তালিকা অনুযায়ীই শেখ মুজিবের সময় পাকিস্তানি দালালদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সুতরাং, এই তালিকায় যারা আছে তারা সবাই ভাতা প্রা্প্ত পাকিস্তানের দালাল ছিল। স্বাধীনতার পর তারাই আওয়ামী লীগের যোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে। অনেকেই হাস্যরস করে বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানিদের দালাললি করে ভাতা পেতো এখন তারা আওয়ামী লীগের দালালি করে ভাতা পায়।
এদিকে শেখ হাসিনার বক্তব্য অনুযায়ীই আওয়ামী লীগের রাজাকার ও পাকিস্তানের দালাল রয়েছে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুইটি সভায় তিনি বলেছেন-মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য কিছু লোক শান্তি কমিটির সদস্য হয়েছিল। বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে তাদের ক্ষমা করেছিল।
অনুসন্ধান বলছে, আওয়ামী লীগে রাজাকার আর পাকিস্তানের দালাল থাকার কারণেই শেখ মুজিব সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল। তাহলে, শেখ মুজিবের ক্ষমা ঘোষণা ও শেখ হাসিনার এখনকার বক্তব্যই প্রমাণ করে যে, প্রকাশের পর যে তালিকা তারা স্থগিত করেছে এটাই রাজাকারদের আসল তালিকা। এই তালিকার সবাই পাকিস্তানের দালাল ছিল।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ মুজিবের সময় ৩৭ হাজার লোকের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল। বর্তমান সরকার প্রথম দফায় ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যেই ৮ হাজারের বেশি আওয়ামী লীগের লোক। যদি ৩৭ হাজারের তালিকা প্রকাশ করা হয় তাহলে দেখা যাবে আওয়ামী লীগের রাজাকারের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াতে পারে।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতকে রাজাকারের দল বলে আখ্যাদিয়ে আসছে। কিন্তু, রাজাকারের আসল তালিকা প্রকাশের পর দেখা গেছে আওয়ামী লীগই আসল রাজাকারের দল। স্বাভাবিক কারণেই এটা শেখ হাসিনার জন্য চরম বিব্রতকর অবস্থা। জামায়াত নেতাকর্মীদেরকে এখন আর দালাল বলার কোনো সুযোগ নেই। শেখ হাসিনাই পাকিস্তানি দালালদের নেত্রী। কারণ, সব দালাল তার দলেই অবস্থান করছে বলে দাবি করেছেন তারা।