অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পূর্ব নির্ধারিত তারিখ বৃহস্পতিবারও কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। শেখ হাসিনার অনুগত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট না আসার অজুহাত দেখিয়ে জামিন শুনানি মুলতুবি করেন। শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে বলেছে মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। আদালত তাদেরকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে।
আদালত থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পাড়াসহ সর্ব মহলে প্রশ্ন উঠেছে, খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট কি আসলেই জমা হয়নি নাকি রাষ্ট্রপক্ষ এটাকে গোপন করে রেখেছে?
রাষ্ট্রপক্ষ অস্বীকার করলেও বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ যে খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিয়েছে এটার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরকারপন্থী গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত বহুল প্রচারিত অনলাইন পত্রিকা বাংলাট্রিবিউন ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড’ শিরোনামে বুধবার রাত ১১ টা ৫৩ মিনিটে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টটি পরে রাত সোয়া ১ টায় আপডেট করা হয়েছে।
পত্রিকাটির সিনিয়র রিপোর্টার জাকিয় আহমেদ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাত পৌনে বারোটার দিকে বোর্ডের অন্যতম একজন চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’ তবে আর কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল বোর্ডের এই সদস্য।
ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার আপিল কোর্টের শুনানিতে এ প্রতিবেদন জমা দেবেন মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, কাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল নাগাদও যদি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে পাই তাহলে আদালতে যাবো, নয়তো সময় চাইবো।’ পরে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আবারও এ প্রতিবেদকের প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, আমরা প্রতিবেদন পাইনি।
পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাহবুবুল হক। তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।” বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাট্রিবিউন যে রিপোর্ট করেছে সেটা শতভাগ সত্য। বিএসএমএমইউ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে হস্তান্তর করেছে। সরকারের নির্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল এটাকে গোপন রেখেছেন।
সূত্রটি বলছে, সরকারি ডাক্তাররা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভাল বললেও আসলে অবস্থা খুবই খারাপ। সরকার ভেতরে ভেতরে এটা নিয়ে খুবই টেনশনে আছে। আর তাকে এই মুহূর্তে মুক্তি দেয়াটাও ঝুকিপূর্ণ মনে করছে সরকার। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখন সরকারের প্রতিকুলে। এমন অবস্থায় খালেদা জিয়া বেরিয়ে আসলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। এজন্য খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকার সাহস পাচ্ছে না।
তবে, খালেদা জিয়া যদি চিকিৎসার জন্য বাইরে চলে যায় তাহলে সরকার তাকে মুক্তি দেবে।
এদিকে ঐ দিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট না আসার অজুহাত দেখিয়ে জামিন শুনানি মুলতুবি করলে সরকার ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ সময় আদালতে বেশ কিছুক্ষণ হট্টগোল চলে। একপর্যায়ে আদালত বলেন, যদি আপনারা শান্ত না হন তাহলে আমরা এজলাস ত্যাগ করবো।
পরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শুনানির দিন এগিয়ে আনার দাবিতে অনড় থাকে। এ সময় আবারো হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। নজিরবিহীন এই হট্টগোলের কারন দেখিয়ে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারপতিরা। এ অবস্থায় দুপক্ষের আইনজীবীরা আদালত কক্ষে অবস্থান করছিলেন।