মাদক ও জুয়াবিরোধী অভিযানে আতংকিত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। ক্ষমতাসীন দলের চেনা জানা প্রভাবশালী মুখগুলোকে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন, কেউ কেউ আবার বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন, আবার যারা বিদেশে আছেন তারা এ মূহুর্তে দেশে আসাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন, পরিবার থেকেও তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে আপাতত না ফিরতে। চলমান অভিযান শুরুর পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী অনেক নেতা। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ব্যাপারে সতর্ক।
অবশ্য শুধু যে আতংক আছে তা নয়, আছে উল্টোচিত্রও। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর একশ্রেণির নেতাদের মধ্যে এমন আতংক তৈরি হওয়ায় তা উপভোগ করছেন দলটিরই আরেকটি পক্ষ, যারা ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়েও দলে তেমন বড় কোন পদে নেই কিংবা পদে থাকলেও কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। তারা বরং নানাভাবে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে গ্রেফতারে উৎসাহ দিচ্ছেন এমন কথাও জানা গেছে।
আতংক আর আতংক
অভিযান শুরুর পর থেকেই গ্রেফতার হতে পারেন ক্ষমতাসীন দলের এমন অনেকে আত্মগোপনে। তারা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তালিকা করেই অভিযান চালাচ্ছে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তালিকায় নাম থাকতে পারে এমন নেতারা তো বটেই কর্মীরা পর্যন্ত তালিকায় তাদের নাম আছে কি না কিংবা কার কার নাম আছে তা জানার চেষ্টা করছেন। পুলিশের সাথে ক’দিন আগেও যাদের ছিল চরম সখ্যতা তারা এখন থানার পাশ দিয়েও যাচ্ছেন না। লোক পাঠিয়ে আকারে ইঙ্গিতে জানার ও বোঝার চেষ্টা করছেন, তালিকায় নাম আছে কিনা তা জানতে চাইছেন। পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রচলিত একটি প্রবাদ টেনে বলেছেন, এখন সত্যি সত্যিই ‘চোরের মনে পুলিশ পুলিশ’ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের একাধিক তালিকা করা হয়েছে, একই সাথে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি আর জুয়ার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাও করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরেই অভিযান চালানো হচ্ছে। থানা পর্যায়ে কোনো তালিকা নেই, তাই পুলিশের কাছ থেকেও তারা কোন তথ্য পাচ্ছেন না। ঢাকার বাইরে থেকেও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের এলাকায় অভিযান চলবে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তবে কেউই কাউকে খুব একটা তথ্য দিতে পারছে না, সবার একই কথা, কাকে ধরা দরকার, কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার এমন একাধিক তালিকা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের কাছে দিয়েছে, ওই তালিকা ধরেই চলছে অভিযান।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর পর্যায়ের এক শীর্ষ নেতা, যার বিরুদ্ধে দলের মধ্যেও নানা অভিযোগ রয়েছে, তাকেও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না, পদের কারণে দলীয় কার্যক্রমে অনেকটা বাধ্য হয়ে যোগ দিলেও অনুষ্ঠান শেষে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় বা গোপন স্থানে চলে যাচ্ছেন। টেলিভিশনের ক্যামেরা দেখলে যেসব নেতা চেহারা দেখানোর জন্য পাগল হয়ে যেতেন তারা এখন টেলিভিশনের ক্যামেরা সযতনে এড়িয়ে চলছেন। মন্ত্রী, এমপিদের অতিথি করে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত নানা আলোচনা সভার আয়োজন করে এমন সংগঠনগুলোর তৎপরতাও ঝিমিয়ে পড়েছে।
এই অভিযানে ঘুরেফিরে নাম আসছে এমন একজন নেতা বলেছেন, দীর্ঘদিন পর মনে হচ্ছে তারা বিরোধীদলে আছেন, তিনি বলেন, বিরোধীদলে থাকলে সরকার যদি গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে দল কথা বলে, কর্মসূচি দেয় কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ, যুবলীগের কিছু নেতা এমন এক সমস্যায় পড়েছেন যা আসলে তাদেরকে বিরোধীদলের চেয়ে’ বেশি নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, তারচে’ বড় সমস্যা হচ্ছে মাদক আর জুয়াড়ি হিসেবে ট্যাগ লেগে গেলে তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন, তাই আপাততঃ গ্রেফতার এড়ানোটাই হচ্ছে একমাত্র কৌশল।
অভিযান শুরুর পর যে সব নেতার নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুইজন প্রভাবশালী নেতা, এদের মধ্যে একজনকে দুদকও তলব করেছিল। মতিঝিল এলাকার কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের দু’জন প্রভাবশালী নেতা, রাজধানীর তিন/চারজন সংসদ সদস্য, এদের মধ্যে একজনের ব্যাপারে সরকারের শীর্ষমহল চরম নাখোশ বলে জানিয়েছে একটি সূত্র, বর্তমানে রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় নেই কিন্তু এক সময় ছাত্রলীগের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এমন চার-পাঁচজনের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। রাজধানীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, তাতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, প্রজন্ম লীগসহ কিছু সংগঠনের নেতৃত্ব দেন এমন কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়েও আওয়ামী লীগের অফিসসহ রাজনৈতিক অঙ্গণে কানাঘুষা চলছে। এসব নেতাদের তৎপরতা এখন একেবারে সীমিত, দলীয় অফিস, সচিবালয়সহ কোথাও তাদের দেখা মিলছে না।
আলোচনার শীর্ষে সম্রাট
রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুর, শাহজাহানপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, ফকিরাপুর, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, কাকরাইল, বংশাল, ফুলবাড়িয়া, নবাবপুর, শাহবাগ এলাকা দিয়ে যদি কেউ হাটেন বা নিয়মিত চলাফেরা করেন তাদের যে কারো মনে হতে পারে এই এলাকার ‘সম্রাট’ সম্ভবত: ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। কেন না এসব এলাকার এমন কোন মহল্লা বা অলিগলি নেই যেখানে টের পাওয়া যাবে না ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের উপস্থিতি নেই। প্রায় সর্বত্রই লাগানো আছে তার পোস্টার আর ব্যানার। অনেক স্থানে সড়কের ওপরই বসানো আছে তার প্রমাণ সাইজের প্রতিকৃতি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দিবস মানেই সম্রাটের নামে অসংখ্য তোরণ। রাজধানীর কাকরাইলে যুবলীগের অফিসে তার সাম্রাজ্যের ‘সদর দফতর’। রাজধানীর ক্যাসিনোর অঘোষিত সম্রাট হচ্ছেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। বলা হয়, ক্যাসিনো থেকেই মাসে তার আয় ১৫ কোটি টাকা। এর বাইরে মহানগরীর যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভাগ-বাটোয়ারা করে থাকেন এই সম্রাট। এমনকি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের নির্মাণাধীন ভবন থেকে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগও উঠেছিল সম্রাটের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পর্যন্ত গিয়েছিল। তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন।
ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে তিনি অবস্থান করতে থাকেন কাকরাইলে যুবলীগের কার্যালয়ে। দলের কয়েকশ’ ক্যাডার দিন রাত ওই ভবনের সামনে ও আশপাশে অবস্থান করে। মূলত: গ্রেফতার এড়ানোর জন্যই সম্রাট অফিসে অবস্থান নেন, আর তাকে যাতে ধরে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য দিন-রাত সব সময়ই নেতা-কর্মীদের সরগরম উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছিল। তাদের খাওয়ার জন্য ছিল উন্মুক্ত আয়োজন। অবশ্য, শেষ পর্যন্ত সম্রাট কোথায় আছেন তা পুরোপুরি নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছেন না, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গা ঢাকা দিলেও সম্রাট তাদের নজরদারির মধ্যেই আছেন, তবে তাকে ধরতে হলে অনেক উপরের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ লাগবে।
পাল্টা হুমকি দেয়ার পরদিনই ভোল পাল্টালেন যুবলীগ চেয়ারম্যান
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মীরপুরে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেছিলেন- আপনারা বলছেন, ৬০টি ক্যাসিনো আছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আপনারা ৬০ জনে কি এতদিন আঙল চুষছিলেন? তাহলে যে ৬০ জায়গায় এই ক্যাসিনো সেই ৬০ জায়গার থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সেই ৬০ থানায় যে র্যাব ছিল তাদেরকে অ্যারেস্ট করা হোক। তিনি আরো বলেন, আপনি তো সবই জানতেন। আপনি কি জানতেন না? নাকি সহায়তা দিয়েছিলেন সে প্রশ্নগুলো তোলা হবে। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে গ্রেফতারে তারা ভয় পান না উল্লেখ করে হুমকি দিয়ে বলেন, গ্রেফতার করা হলে তারাও বসে থাকবেন না। এই অভিযান বিরাজনীতিকরণের জন্য কিনা? দলকে পঙ্গু করার জন্য কি না সে প্রশ্নও তোলেন যুবলীগের এ প্রধান নেতা।
অবশ্য এই বক্তব্যে বেশি সময় স্থির থাকতে পারেননি যুবলীগের চেয়ারম্যান। পরে এক অনুষ্ঠানে যুবলীগের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বলেন, বিএনপির আগুন সন্ত্রাসী, হেফাজতের আন্দোলন থেকে শুরু করে বাসে-ট্রাকে পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ মারা, হোলি আর্টিজানে হামলার কথা মনে নাই? এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। আপনাদের স্যালুট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারণে তারা মিটিং করতে পারছেন সভা-সমাবেশ করতে পারছেন। নিজ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট ভালো, ওভার স্মার্টের দরকার নাই, এত কারবারির দরকার নাই।’
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই অভিযানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই সাংসদ বলেন, চট্টগ্রামে আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, শতদল, ফ্রেন্ডসসহ ১২টি ক্লাব আছে। এই ক্লাবগুলোকে তো ধ্বংস করতে দেয়া যাবে না। প্রশাসন কি খেলোয়াড়দের পাঁচ টাকা বেতন দেয়? ওরা কীভাবে খেলে, টাকা কোন জায়গা থেকে আসে, সরকার কি ওদের টাকা দেয়? দেয় না। এই ক্লাবগুলো তো চালাতে হবে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, তাস খেলা জুয়া হলো? তিনি বলেন, ক্লাবের তাস খেলা বন্ধ করে কোন লাভ হবে না। তাস খেলা বন্ধ করা হলে ছেলেরা রাস্তায় ছিনতাই করবে।
বিপাকে মেনন
সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ক্যাসিনো কেলেংকারি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মতিঝিল এলাকার সংসদ সদস্য মেনন ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের সভাপতি। ওই ক্লাবের ক্যাসিনো চলার ঘটনায় মেননের সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। মেনন বলছেন, সভাপতি পদটি অলংকারিক আর তিনি একবারই ওই ক্লাবে গিয়েছিলেন ফিতা কাটতে। অবশ্য মেননের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না অনেকে, তারা বলছেন, একজন এমপি, সভাপতি হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছেন আর সেখানে কি হয় তা জানবেন না এটা হয় না, তিনি কিছু জানেন না বলে দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের আশংকা বিএনপির
শুধু আওয়ামী লীগই নয়, ক্ষমতাসীনদের সাথে আপোষরফা করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে যাচ্ছিলেন বিএনপির এমন গুটিকতক নেতার মধ্যেও আছে আতংক। কেন না, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলমত বিচার না করে অভিযান চালানো হবে। বিএনপির একজন মহানগর পর্যায়ের নেতা বলেছেন, এ সরকারকে বিশ্বাস করার কিছু নেই, তারা এ পর্যন্ত যাদেরকে গ্রেফতার করেছে তাদের মধ্যে একমাত্র খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার রাজনৈতিক প্রভাব আছে। বিএনপির ওই নেতার আশংকা নিজ ঘরের এক-আধজনকে ধরে সরকার হয়তো তার আসল এজেন্ডা অর্থাৎ বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে।
খালেদা জিয়া যা পারেননি, শেখ হাসিনা তা পেরেছেন- এ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার ওই মন্তব্যকে হাস্যকর উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, এ সরকার ঢোলটা একটু বেশি জোরেই বাজাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির আমলেই চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, ঢাকা মহানগর বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুকে। খালেদা জিয়ার সরকার একজন ’রানিং এমপি’কে গ্রেফতার করেছিল, পক্ষান্তরে শেখ হাসিনার সরকার কেবলমাত্র ঢাকা মহানগর যুবলীগের মধ্যমসারির একজন নেতাকে গ্রেফতার করেছে মাত্র, সুতরাং খালেদা জিয়া পারেননি বলে যারা মিথ্যাচার করছেন তাদের উচিত সে সময়ের পত্র-পত্রিকাগুলো ঘেটে দেখা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযানকে ’আইওয়াশ’ মনে করছেন। ময়মনসিংহে এক সমাবেশে তিনি বলেছেন, চুনোপুটিদের ধরে সরকার নিজেদের গায়ের গন্ধ দূর করার চেষ্টা করছে।
আঙ্গুলচোষা তত্ত্ব
যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদকে গ্রেফতারের দিন মিরপুরে এক সমাবেশে পুলিশের সমালোচনা করে যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, পুলিশ এতদিন অভিযান চালায়নি কেন? তারা কি আঙ্গুল চুষছিল? যুবলীগ সভাপতির এ বক্তব্যটি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি করে। তারেক রহমানকে জি কে শামীম টাকা পাঠাতেন বলে অভিযোগ করেছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ২৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, জি কে শামীম প্রতি মাসে এক কোটি টাকা করে তারেক রহমানকে দিতেন। বিএনপির অনেক নেতাকেও তিনি পয়সা দিতেন।
তথ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের জবাব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ২৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা ক্যাসিনোর টাকা যদি তারেক রহমানকে পাঠাতেনই, তাহলে সরকার তখন কী করত? সরকার কি বসে বসে আঙ্গুল চোষে? তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকাকে ক্যাসিনোর শহর বানানো হয়েছে।
দলীয় নেতাদের রক্ষায় সতর্ক আওয়ামী লীগ
এ অভিযানে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের অজানা নয়। গ্রেফতার আতংকের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে, এরপরের টার্গেট কারা? বা কোন খাতে অভিযান চালানো হবে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, মাদক ব্যবসার মতো বিষয়গুলো এরপরে অভিযানের মধ্যে চলে আসবে বলে অনেকেরই ধারণা। অবশ্য নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী নির্ভর দল, সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন সত্য, কিন্তু দলের নেতা-কর্মীরা নিজেদের অসহায় মনে করে, অপদস্ত হন এমন পরিস্থিতি তিনি হয়তো বেশি দিন চালানো হবে না। একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের হাইকমান্ড তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষোভ আর আতংক যাতে বেশি ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য বার বার ‘তালিকা’ কথাটির ওপর জোর দিচ্ছে।
এর আগে মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযানকালে টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হকের নিহত হওয়ার উদাহরণ টেনে তারা বলেন, ওই অ-িভযানও সারাদেশে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়েছিল। টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হক ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ঘটনায় যুবলীগ তো বটেই আওয়ামী লীগের মধ্যেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল, এবার যাতে তেমন কিছু না হয় সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সতর্ক। একজন নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনোই এর কর্মীদের হতোদ্যম করে দেয়ার মতো কিছু করবে না, তাছাড়া যেসব দুর্নীতি হয়েছে আর এর মাধ্যমে অনেকে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করলেও আওয়ামী লীগসহ এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল পর্যন্ত সে অর্থ পৌঁছে গেছে এবং যায়। অর্থ সরবরাহের ’পাইপ লাইন’ বন্ধ হয়ে গেলে তা দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সংক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে, তাই যতটা প্রচার পাচ্ছে সে অনুপাতে এ অভিযানে গ্রেফতারের সংখ্যা খুবই কম।
তথ্য সূত্র: সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯