জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ও দুই রাজ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্তের পর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। এরইমধ্যে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের রাজধানী মুজফফরাবাদে আইনসভায় বিশেষ অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক ঘোষণায় বলেছেন, আজাদ কাশ্মিরে হামলা হলেই ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে ইমরান খান বলেছেন, আপনারা (মোদী) সামরিক অভিযান চালিয়ে কাশ্মিরের এই অংশ দখল করার পরিকল্পনা করছে। শুধু কাশ্মির নয়, গোটা পাকিস্তানটাই আপনারা দখল করতে চান! আপনার প্রতি আমার বার্তা— তোমরা এগোলে ভুল করবেন। কারণ তোমাদের প্রতিটা ইটের জবাব আমরা পাথরে দেবো। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব!
চলমান এই উত্তেজনার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার কাশ্মির সীমান্তে গোলাগুলিতে দুই পক্ষের ৮ সেনাসদস্য নিহতের খবর জানিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সংঘর্ষ বিরতি নীতি লঙ্ঘন করে বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের কৃষ্ণা ঘাঁটি সেক্টরের নাঙ্গি টেকরা অঞ্চলে হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। জবাব দিতে পাল্টা হামলা চালায় ভারতীয় সেনাসদস্যরা।
উত্তপ্ত কাশ্মির ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে পাকিস্তানের দেয়া চিঠির সাড়া দিয়েছে সংস্থাটি। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার নিউইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে। বৈঠকে বিশ্বনেতারা কাশ্মির সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে কাশ্মিরের মুসলিমদের জীবন ‘অনিরাপদ’ বলে পাক সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও জম্মু ও কাশ্মিরের পরিস্থিতি বেশ ‘স্বাভাবিক’ বলে দাবি করছে ভারত সরকার।
ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সাদামাটাভাবে বলা যায়, ভারতের অবস্থানটি যুক্তিহীন হওয়ায় তা হিতে বিপরীত হবে। কারণ সে আলোচনার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বাস্তবতা হলো কাশ্মির হলো একটি আন্তর্জাতিক বিরোধ এবং ভারত একতরফাভাবে জম্মু ও কাশ্মিরের মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে। এটিকে কেউই ভারতের নিজস্ব বিষয় হিসেবে গ্রহণ করবে না।
এছাড়া বিশ্ব জনমত গ্রহণ করে নিয়েছে যে কাশ্মির বিরোধে পাকিস্তান একটি পক্ষ। ভারত সীমান্ত পরিবর্তন করেছে কিনা তা কোনো বিষয় নয়। আর এলওসি বা এলওএসিতে এর কোনো প্রভাব নেই, বলাটাও ভিত্তিহীন। বিষয়টি যদি এতই সহজ হতো, তবে মোদি সরকার কেন গিলগিট-বাল্টিস্তান দিয়ে যাওয়া সিপিইসিকে হজম করেনি? আমরা কিন্তু তখন ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্বের কথা বলেছি।
তাদের ভাষ্য, এই জটিলতা থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো পাকিস্তানের কাছে প্রস্তাব দেয়া যে ভারত এসব মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। সৌভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউই সামনে দাঁড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না, পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতকে ক্ষ্যাপাতে চাইছে না।
সূত্র: আরটিএনএন