অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সাউথ চায়না মনিটরিং পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত ১০ বছরে দেশের ব্যপক উন্নয়ন করার দাবী করছে তথাপি আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। পত্রিকাটির মতে যদিও বাংলাদেশের ব্যপারে চীনের সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এবং তা নিয়ে ভারতের অস্বস্তিকে শেখ হাসিনার সরকার ভারসাম্যপূর্নভাবেই ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছে তথাপি বিষয়টি নিয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে এখনো বেশ উত্তপ্ত অবস্থাই বিরাজ করছে।
চীন তার ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নামক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। আর এই বিনিয়োগ হলে বাংলাদেশই হবে পাকিস্তানের পর এই অঞ্চলে চীনের দ্বিতীয় বৃহৎ অংকের বিনিয়োগকারী দেশ। অন্যদিকে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ ভারত এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর অধিকাংশই আবার নিজেদের স্বার্থে অর্থাৎ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাতায়াত সহজীকরনের উদ্দেশ্যে।
চীনের বিনিয়োগ নেয়ার ব্যপারে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বেশ বেপরোয়াভাব দেখিয়েছেন। কেননা এই টাকা তার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চালানোর জন্য দরকার ছিল। আর চীনা এই বিনিয়োগ নিয়ে ভারতসহ আরো বেশ কিছু প্রতিবেশী দেশ একটু প্রতিক্রিয়া দেখালেও হাসিনা তাতে তেমন একটা পাত্তা দেননি। এমনটাই জানানো হয় ‘Bangladesh election: will Sheikh Hasina’s China-India balancing act be enough to keep power?’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে- যা সাউথ চায়না মনিটরিং পোস্টে, গত ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত হয়।
রিপোর্টে বলা হয় ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্য এবার মূল চ্যালেঞ্জ হবে নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও আধিপত্যের লড়াই। মাত্র ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন তুলেছে ৪ হাজারেরও বেশী প্রার্থী। আওয়ামী লীগের জন্য এবারের নির্বাচনটি আরো কঠিন কেননা ১০ বছর পর এবারই প্রথম বিরোধী দলগুলো ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে।
কলামিস্ট সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, বিরোধী দলগুলোর এই ঐক্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। এই ঐক্য প্রক্রিয়া বিরোধীদেরকে সংহত করবে এবং রাজনীতির মেরুকরণটিকে স্পষ্ট করবে। কেননা ঐক্যটি এমনভাবে হয়েছে যে একদিকে আছে আওয়ামী লীগ আর অন্যদিকে বাদ বাকি সব দল।”
প্রতিবেদনে আরেক সিনিয়র কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়, যদি হাসিনা ও আওয়ামী নেতারা আভ্যন্তরীণ কলহকে দূর করতে না পারেন, তাহলে মনোনয়ন নেয়া অনেক প্রার্থী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন যা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অনেকে দলের মনোনীত প্রার্থীকে স্যাবোটেজও করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অবশ্য এরকম সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেননা। তারা হুমকিও দিচ্ছেন যে যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ নির্বাচন করে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হবে।
অন্যদিকে বিএনপি নেতা মওদূদ আহমেদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের অনেকেই ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। তারা প্রশাসনকেও নগ্নভাবে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছেন। এমতাবস্থায় মানুষ পরিবর্তনের জন্য উম্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশে স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
চীনা এই পত্রিকায় অবশ্য বলা হয় যে বিরোধীরা ঐক্য করতে সক্ষম হলেও নির্বাচনে জয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবে তা এখনো তারা নির্ধারণ করতে পারেনি। এমনকি শেখ হাসিনার ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার মত তাদের তেমন সুনির্দিষ্ট ঘোষণাও নেই। তথাপি হাসিনার ভাগ্য নির্ধারন করছে দেশের যুবক-যুবতী তথা নতুন ভোটারদের উপর। এবার ১৮ থেকে ২৮ বছরের মাঝামাঝি এমন ভোটারের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৩৫ লাখ।
যুব সম্প্রদায় কোন সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে প্রভাবিত হয়। তারা আগের প্রজন্মের মত অন্ধভাবে কোন দলকে সমর্থন করে যেতে আগ্রহী নয়। এ প্রসঙ্গে সালমা আশরাফি তনয়া নামের ১৯ বছরের এক তরুনী প্রতিবেদককে বলেন, “আমাদের সামনে বরাবরই দুই অশুভ পক্ষই থাকে। ফলে আমাদেরকে বাধ্য হয়ে তাকেই ভোট দিতে হয় যে অপেক্ষাকৃত কম খারাপ। এবারও তার ব্যতিক্রম হবেনা।”