অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশে আবার আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। খুব শিগগিরই কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি হবে সরকারের এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরাও তাদের আন্দোলন স্থগিত রেখেছে। কিন্তু, হঠাৎ করেই সরকার বিষয়টিকে আবার সামনে এনেছে। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে পরিকল্পিতভাবেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল হবে না সংসদে এমন ইঙ্গিত দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে মাঠে নামিয়েছেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন ডাকে কোটা আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে তার জড়ো হওয়ার পরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ছাত্রলীগ নেতারা কোটা আন্দোলনকারীদের নেতা নুরুল হক নুরুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও সরকার কোনো হাসপাতালেই তাকে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না।
এরপর রোববার কোটা আন্দোলনের আরেক নেতা রাশেদ খানকে আটক করে তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দিয়েছে সরকার। সোমবার পুলিশ তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তারা। কিন্তু সোমবারও সেই একই দৃশ্য দেখা গেল। সোমবারও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কোটা আন্দোলনের আরেক নেতাকে রাস্তায় ফেলে সাপের মতো পিটিয়েছে। ছাত্রলীগের এই নির্মম ও নৃশংস হামলা থেকে রক্ষা করার জন্যও কেউ এগিয়ে আসার সাহস দেখাতে পারেনি।
গত দুইদিনের ছাত্রলীগের এই নৃশংসতাকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের সেই লগি-বৈঠার সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকে।
গত দুইদিনের ঘটনা নিয়ে রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির ব্যবস্থা না করে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদেরকে মাঠে এনে তাদের ওপর ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিলেন কেন? আসলে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য কি?
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন আগে কোটা বিরোধী আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পর এনিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, সেদিন রাতে তিনি ঘুমাতে পারেন নি। ওই সময় সরকার একটা বড় ধরণের সংকট মুহূর্ত পার করেছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তড়িঘড়ি করে শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।
জানা গেছে, তখন থেকেই শেখ হাসিনা প্রতিশোধ নেয়ার একট সুযোগ খুঁজছিলেন। সেই প্রতিশোধটাই গত দুইদিনে নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
তবে, রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ বলছেন, সরকার যে কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদেরকে মারধর করছে। এটার পরিণামও খুব বেশি একটা ভাল হবে না। সরকার শিক্ষার্থীদেরকে ছাত্রলীগকে দিয়ে পিটুনি দেয়ার পর এখন কোটা নিয়ে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে এবং কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে। তাহলে শুধু শুধু তাদেরকে ছাত্রলীগ আর পুলিশ দিয়ে নির্যাতনের কি দরকার ছিলো? এর মাধ্যমে কি শেখ হাসিনা প্রতিশোধ নিলেন?