অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যেসব ঘটনা ঘটছে তার দিকে খুব কড়া নজর রেখেছে ভারত। কেননা নির্বাচনে কি ফলাফল হয় তার উপর ভারতেরও অনেক সমীকরন নির্ভর করছে। বেশ বিস্ময়কর শোনালেও এরকমই একটি কলাম প্রকাশ করেছে ভারতের তামিল-নাডু ভিত্তিক পত্রিকা ‘দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন’।
কলামটি লিখেছেন সাংবাদিক প্রতিম রঞ্জন। তিনি তার কলামে লিখেছেন শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গত ১০ বছর বেশ স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ন ছিল। কিন্তু নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন অনিশ্চয়তা বাড়ছে। কেননা নির্বাচনে অন্য কেউ আসে কিনা বা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভিন্ন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় কিনা কিংবা তেমন কিছু হলে সেই সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্ক কেমন হবে সেটা নিয়ে ভারতের নীতি নির্ধারনী মহলও বেশ উদ্বিগ্ন।
সাংবাদিক প্রতিম রঞ্জন আরো দাবী করেছেন যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনটি যদিও ভাল হয়নি এবং অনেকগুলো বিতর্কিত ঘটনাও সেই সময়ে ঘটেছে তা স্বত্বেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়াটাকে ভারতসহ বিশ্বের অনেক পরাশক্তিই স্বাগত জানিয়েছিল কেননা তারা মনে করেছিলেন বাংলাদেশে সব ধরনের অস্থিরতা এবং সহিংসতা বন্ধে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। তবে এবারের নির্বাচনে ২০১৪ সালের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি নিশ্চিতভাবে ঘটবেই এমনটা মনে করার কোন কারন নেই।
একথা ঠিক যে, পশ্চিমা অনেক দেশেরই বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে বেশ আপত্তি রয়েছে তথাপি ভারত সেই নির্বাচনকে বরাবরই বৈধতা দিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার শরীক দলগুলো সেই নির্বাচন বয়কট করেছিল। কিন্তু তারপরও ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বেশ ঢাকঢোল পিটিয়েই সেই নির্বাচনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
এই কলামে আরো বলা হয়, দিল্লী এখন হাসিনার উপর সমর্থনটা ঝুলিয়ে রেখেছে। শেখ হাসিনার এখন চেষ্টা করা উচিত যাতে ৫ জানুয়ারীর মত নয় বরং অংশগ্রহনমুলক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে তার মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের ক্ষমতায় আসা যায়।
কলামে শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করে বলা হয় সরকারটি ভীষন রকম অব্যবস্থাপনায় আক্রান্ত। তাছাড়া বাংলাদেশে সুশাসনের এখনো তীব্র অভাব এবং দুর্নীতি এখনো অপ্রতিরোধ্য- যা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন জোটের জন্য একটি বিরাট প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দিতে পারে। তবে আশার দিক হচ্ছে এই সরকারের এখনও ফিক্সড ৩৫-৩৭ শতাংশ জন সমর্থন রয়েছে।
কলামে মন্তব্য করা হয়, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের জন্য জিতে আসাটা খুব সহজ হবেনা। তাছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐতিহ্য হলো এখানে পর পর কোন দল ক্ষমতায় আসতে পারেনা। আওয়ামী লীগ এসেছে ৫ জানুয়ারীর মত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে। তবে নির্বাচন ভাল হলে এবং তাতে সব দল অংশ নিলে ফলাফল আওয়ামী লীগের অনুকুলে নাও আসতে পারে। অন্য কেউ ক্ষমতায় আসলেই রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে সাথে সাথেই যা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে আর প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত কখনোই তা চায় না।
তাছাড়া এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ভারত অর্থনৈতিকভাবেও বেশ সুবিধা আদায় করে নিতে পেরেছে। কলামে বলা হয়, ভারতের চলমান ‘এ্যাক্ট ইস্ট’ এজেন্ডার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি দেশ।
নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসার পর গত ৪ বছরে ভারত বাংলাদেশকে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার ঋন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যদিও বাস্তবে দেয়া হয়েছে খুব সামান্যই। অন্যদিকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও ভারত বিনিয়োগ করতে চেয়েছে।
তাছাড়া নিরাপত্তার দিক থেকেও বাংলাদেশ ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। বিশেষ করে চীনের সাথে কুটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের যে টানাপোড়েন চলছে সেখানে যে কোন সময় বাংলাদেশও একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। এতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর যাবতীয় ক্রয় বিক্রয়ে চীনের একচেটিয়া প্রভাব থাকলেও এই মোদী সরকারের আমলেই ভারত প্রথম বাংলাদেশের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে। গত বছর ভারত থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বেশ কিছু সামরিক সরঞ্জামও ক্রয় করেছে।
তাছাড়া বাংলাদেশের সাথে ভারতের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চল দিয়ে প্রায় ৪ হাজার ১শ কিলোমিটারের বিশাল স্থল সীমানা বিদ্যমান। এটাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ যে কোন সময়েই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
কলমাটিতে দাবী করা হয় যে শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসেছেন যার জন্য তাকে ধন্যবাদ দেয়া যেতেই পারে। আর সেই কারনেই এই গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ভারত শেখ হাসিনার উপরই সবচেয়ে বেশী ভরসা রাখতে পারছে। আর দুই দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়গুলো যাতে কোনভাবেই দুই দেশের মধ্যকার কুটনৈতিক সম্পর্ককে নষ্ট করতে না পারে সেটা নিয়েও ভারত বেশ সচেষ্ট রয়েছে।
কলামটিতে বিএনপির ব্যাপারে বলা হয় যে দলটি এবারের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছে তবে নেতৃত্বের সংকটের কারনে তারা নির্বাচনে কতটা ভাল করতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিএনপি গত ৫ বছরে ভারতের বিরুদ্ধে তেমন কোন আন্দোলন করেনি বা অবস্থান নেয়নি যাতে মনে হচ্ছে তারা এখন ভারতের আস্থা অর্জনেও বেশ আগ্রহী। অবশ্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের শত উস্কানিতেও ফাঁদে না পড়ে বিএনপি সহিংসতায় জড়ায়নি, যার জন্য কলাম লেখক প্রতিম রঞ্জন বিএনপির প্রশংসাও করেছেন।
কলামটি শেষ হয়েছে একটি প্রশ্ন তুলে আর তা হলো, যদিও সম্প্রতি বিএনপি সহিংসতায় জড়ায়নি এবং ভারতের বিরুদ্ধেও কথা বলেনি। তথাপি বিএনপি কি আসলেই পাল্টেছে?