অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি।
ইসি সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেসবুক, টুইটার, ভাইবারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো প্রার্থী বা সমর্থক বা রাজনৈতিক দল কোনো প্রচারণা চালাতে পারবে না—এ ধরনের একটি বিধান বিধিমালায় সংযোজন করার প্রস্তাব তাঁরা করেছেন।
এদিকে এমন আইনকে কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকগণ। তারা বলছেন এমন আইনের মাধ্যমে মূলত সরকারি দলের প্রার্থীদের ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, দুর্নীতি, অপকর্মকে আড়াল করার চেষ্টাই করছে নির্বাচন কমিশন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের চিন্তা অবাস্তব। এমন বিধান করার আগে ইসিকে আরও ভাবতে হবে। ইসি চাইলেই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে প্রচার বন্ধ করতে পারবে না। এটা সম্ভব নয়।
বিএনপির পক্ষ থেকেও এমন আইনের বিরোধীতা করা হয়েছে। বিএনপি বলছে, ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ডিজিটাল প্রচারণার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আবারও একটি ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সরকারি প্রেসক্রিপশনে এগুচ্ছে তারা।’
বিএনপির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ‘আচরণ বিধিমালা সংশোধনের নামে একটি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে এই কালো আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি কারসাজি আড়াল করতে অবাধ তথ্য প্রবাহের হাত-পা কেটে ফেলা।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে এক কলঙ্কিত নির্বাচন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এছাড়া এই সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও খুব নগ্নভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, রক্তাক্ত ভোট সন্ত্রাস, বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মনোনয়নপত্র জমা দানে বাধা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের দাবি, নির্বাচনের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যাতে মানুষের কাছে প্রকাশ না পায়, ভোট কেন্দ্রে ভোটার শূন্য অবলা প্রাণী(কুকুর) মার্কা নির্বাচন যাতে দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে না পারে, সেজন্যই সরকারের নির্দেশে এই নতুন আইন করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাতি বিধ্বংসী প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর মত জরুরি কাজে যেখানে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না, ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, সেখানে নির্বাচনের প্রচারণা বন্ধের মত অপ্রয়োজনীয় কাজে উঠেপড়ে লেগেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের উচিত হবে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার বন্ধের বদলে অপপ্রচার বা বিদ্বেষমূলক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে সেগুলো বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া।
ভোটের সময় দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের প্রমাণীত দুর্নীতি আর অপকর্মগুলো জনগনের সামনে তুলে ধারাটা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের বিপরীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুবই কার্যকর। এর মাধ্যমে মানুষ ভালো ও সৎ প্রার্থীকে বাছাই করতে পারে। অথচ ইসি মানুষের সঠিক মতামত প্রকাশের এই সুযোগটুকু বন্ধ করে দিতে চাইছে। এমন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসি সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।