অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার বিশ্ব জনমত গঠনে সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে দাবি করে আসছে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দাবি করেছেন যে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষায়- শেখ হাসিনা এখন আর বাংলাদেশের নয়, তিনি এখন বিশ্ব নেতা। তিনি বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। তিনি বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে সবার দৃষ্টি এখন শেখ হাসিনার দিকে। আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিক তৎপরতায়ও সরকার ব্যাপক সফল বলেও দাবি মন্ত্রী-এমপিদের।
তবে সরকারের দাবির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। আর দিন যত যাচ্ছে থলের বিড়াল সবই আস্তে করে বেরিয়ে আসছে।
সর্বশেষ রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে চীন-রাশিয়ার ভেটোর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে কূটনৈতিক তৎপরতায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য কয়েক ছটাক ত্রাণ দেয়া ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিভিন্ন সংস্থার কোনো পদক্ষেপই লক্ষণীয় নয়। রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন বন্ধ কিংবা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। তারা কয়েক ছটাক ত্রাণ দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু হত্যা-নির্যাতনের বিপক্ষে কোনো শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না।
এছাড়া জাতিসংঘও যে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আন্তরিক নয় সেটাও আজ প্রমাণিত হয়ে গেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব হত্যা-নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারকে হুমকি-ধামকি দিলেও মিয়ানমারে অবস্থানরত জাতিসংঘেরই এক কর্মকর্তা রেনাটা লক রোহিঙ্গা নিধনে মদদ যোগাচ্ছে। গত পরশুদিন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকার বৈঠক করেছিল। কিন্তু, কিছুতেই কিছু হলো না। বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে চীন-রাশিয়ার ভেটোতে সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। এসব থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করতে পারছে না বাংলাদেশ।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন চীন-রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিবে। কিন্ত, চীন-রাশিয়া সমর্থন না দেয়ায় প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি চীন-রাশিয়াকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, তাদের দ্বিচারিতা সহ্য করা হবে না।
আন্তর্জাতিক দুই পরাশক্তিকে দেয়া কাদেরের এই হুমকি নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, চীন-ভারত ও রাশিয়ার সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ওবায়দুল কাদের এসব ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। মিয়ানমার বাহিনী দফায় দফায় আকাশসীমা লঙ্গন করলেও যারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না, বিশ্বের পরাশক্তি চীন-রাশিয়াকে এ ভাবে হুমকি দেয়া তাদের শোভা পায় না। কাদের কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে? ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের কারণে চীন-রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য সহযোগিতাও তুলে নিতে পারে।
Discussion about this post