রাখাইনে গত ২৪ আগস্ট রাতে পুলিশচৌকিতে হামলার অজুহাতে সেনা অপারেশন শুরু হলেও রোহিঙ্গা নিধনের নীলনকশা আগেই চূড়ান্ত করা হয়। গত ১৪ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ ও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সু চি সরকারকে ১১টি সুপারিশ সংবলিত খোলা চিঠি দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী সমর্থিত ২০টি রাজনৈতিক দল।
এর আগে দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে। সরকারকে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, ১১ লাখ বাঙালি রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে বসবাস করছে। তারা সহিংসতার গুজব ছড়িয়ে রাজ্যটির নিরাপত্তা বিঘিœত করছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে এসব বাঙালি সন্ত্রাসীদের বিতাড়ন করতে হবে।
‘টুয়েন্টি পলিটিক্যাল পার্টিস আর্জ গভর্নমেন্ট টু অ্যাক্ট অন রাখাইন ইস্যু’ শিরোনামে এ খবর প্রকাশিত হয় মিয়ানমার থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী দৈনিক মিয়ানমার টাইমস ও দৈনিক মিজিমাতে।
শান্তি ও সংঘর্ষ এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর ‘রোহিঙ্গা বিতাড়নের’ এমন প্রস্তাবের ১০ দিনের মাথায় রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু হয়। এতে প্রমাণিত হয় রোহিঙ্গা গণহত্যা-নির্যাতন-অগ্নিসংযোগ-বিতাড়নের নীলনকশা ওই প্রস্তাবের মধ্যেই অন্তর্নিহিত।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার সূত্র ধরে মিজিমার প্রধান সংবাদে বলা হয়, মিয়ানমারের নিউ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি উ থেইন নায়ান্ট বলেছেন, রাখাইনে সব ঘটনা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব ঘটনা মোকাবিলার জন্য সরকার ‘কাউন্টার টেররিজম’ আইন প্রয়োগ করতে পারে, যা ২০০৪ সালে পার্লামেন্টে প্রণয়ন করা হয়। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফোর্স পার্টির মুখপাত্র উ নে মি জ বলেন, মিয়ানমার নিয়ে আমরা কোনো আন্তর্জাতিক মতামত বিশ্বাস করি না। এ দুটি দলসহ দেশটির ২০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা আলোচনায় বসে একমত হয়ে বলেন, ১১ লাখ বাঙালি রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে বসবাস করে। নিরাপত্তা ইস্যুতে বাঙালি সন্ত্রাসীদের বিতাড়ন করতে হবে।
মিয়ানমার টাইমস জানায়, আলোচনায় বসার পর সরকারকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, দেশে কাউন্টার টেররিজম আইন চালু হলে রাখাইন স্টেটে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা কমে আসবে। নিরাপত্তা ইস্যুতে কেন সরকার রাখাইন স্টেটে এই আইন প্রয়োগ করছে না, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। চিঠিতে উদাহরণ হিসেবে গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ৯ সীমান্ত পুলিশ হত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। ওই দুটি দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদের অনলাইন ভার্সন থেকে নেওয়া লিঙ্ক ও প্রতিবেদনের স্ত্রিনশট আমাদের সময়ের কাছে রয়েছে। তবে সম্প্রতি ওই লিঙ্কের নিউজ পাওয়া যাচ্ছে না।
শান্তি ও সংঘর্ষ গবেষকরা বলছেন, বিশ্বমহলকে এড়ানোর হুঙ্কার দিয়ে রোহিঙ্গা নিধনের প্রস্তাবনার পর তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ পরিস্থিতে মিয়ানমারের প্রভাবশালী ওই দুটি দৈনিক তাদের অনলাইন থেকে এ ধরনের সংবাদ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ৯ আগস্ট ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু দেশটির পার্লামেন্টে বলেছিলেন, রোহিঙ্গাসহ অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে সরকার বিস্তারিত নির্দেশাবলি জারি করেছে। ৪০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা ভারতে বসবাস করছে। ভারতের কড়া নির্দেশের পর পরই রোহিঙ্গা বিতাড়নের কৌশল বেছে নেয় মিয়ানমার। এ ক্ষেত্রে কথিত উগ্রবাদী সংগঠন ‘রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলায় ২৪টি পুলিশচৌকিতে হামলার ঠুনকো অজুহাত দাঁড় করানো হয়। তবে ১৪ আগস্টে মিয়ানমারের ২০ রাজনৈতিক দলের মধ্যেকার আলোচনা ও সরকার বরাবর পাঠানো খোলা চিঠিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, রোহিঙ্গা নিধনের নীলনকশা ওই দিনই হয়, যা ছিল সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত অপারেশন।
সূত্র: শীর্ষনিউজ
Discussion about this post