এক কালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও টেস্ট ক্রিকেটের বড় ভাই অস্ট্রেলিয়ার এযাবত কালের সব দম্ভ ও অহংকার চূর্ণ করে দিয়ে ১ম টেষ্টে ২০ রানে পরাজিত করলো টেস্ট ক্রিকেটের ছোট ভাই বাংলাদেশ। এই জয় ক্রিকেটের, এ জয় টেস্ট ক্রিকেটে বড় ভাই সেজে থাকা কিছু দাম্ভিক দেশের বৈসম্যপূর্ণ আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জয়।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মতো টেস্টটি খেলতে নামার আগে মুশফিক-সাকিবদের মনে রোমাঞ্চের পাশাপাশি একটা চাপা কষ্ট বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুষড়ে দিচ্ছিলো। সেই কষ্ট অবহেলা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের কষ্ট! সেই কষ্ট নিশ্চই এখন আর অবশিষ্ট নেই।
টেস্ট পরিবারের ‘বড় ভাই’ অস্ট্রেলিয়া ‘ছোট ভাই’ বাংলাদেশকে কেবল তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যই করে গেছে শুধু! বাংলাদেশকে যথাযথ প্রতিপক্ষ হিসেবে মর্যাদা-সম্মান দেয়নি তারা। সমমর্যাদায় বুকে টেনে নেওয়ার বদলে আত্ম-অহমিকার মিথ্যা বড়াই করে ‘ছোট’ বলে বাংলাদেশকে এড়িয়ে চলেছে! সেই অহমিকাকে আজ মাটিতে নামালো বাংলাদেশ।
দাম্ভিকতার পোষাকে ভারত বাংলাদেশকে তাদের দেশে দাওয়াত দিতে কার্পণ্য করলেও বাংলাদেশ সফরে এসেছে ৪ বার। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ তাই ভারতের সেঙ্গে খেলেছে ৯টি টেস্ট। সেখানে অস্ট্রেলিয়ানদের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছে মাত্র ৪টি। যার সর্বশেষটি সেই ২০০৬ সালে। একমাত্র মুশফিকুর রহীম ছাড়া, তার এই টেস্ট দলের বাকি কারো তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকই হয়নি! মুশফিকের তার আগেই টেস্ট অভিষেক হলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই সিরিজে তিনি দলে ছিলেন না।
২০০৩ সালে হাটি হাটি পা করতে থাকা বাংলাদেশ যখন অস্ট্রেলিয়া সফরে গেলো, ডেভিড হুকস যখন বলেছিলেন, বাংলাদেশকে এক দিনে টেস্ট হারানো সম্ভব। সেই জন্য কিছু ফরমুলাও বাতলে দিয়েছিলেন। তখন আমরা এর মারাত্মক কিছু জবাব দিতে পারিনি। কিন্তু এবার বাংলাদেশ সেই জবাব দিতে পেরেছে।
১৪ বছর পর এসে ঢাকা টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারিয়ে তার জবাবের পাশাপাশি ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য ২৬৫ রানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়ার্নার-স্মিথরা গুটিয়ে গেল ২৪৪ রানে। সাকিব আল হাসান নিয়েছেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো টেস্টে ১০ উইকেট তুলে নিলেন তিনি। গতকাল তৃতীয় দিন শেষ ২ উইকেটে ১০৯ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। আজ দিনের প্রথম ঘণ্টায় ওয়ার্নার-স্মিথ জুটি ৬৫ রান তুলে ফেলে ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে প্রায় ছিটকেই দিয়েছিলেন। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির আগের ঘণ্টায় বাংলাদেশ ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরে। সাকিব ফেরান ওয়ার্নার-স্মিথ ও ওয়েডকে। বিরতির পর সাকিবের বলেই ফেরেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সাকিবের ৫ উইকেটের পাশাপাশি তাইজুল নিয়েছেন ৩ উইকেট, মিরাজ ২টি। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ ১১২ রান ওয়ার্নারের। স্মিথ করেছেন ৩৭, প্যাট কামিন্স ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
Discussion about this post