অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে দিন কাটছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একক নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এ কথাটি প্রতিষ্ঠিত করতে আওয়ামী লীগের ৪৫ বছর সময় লেগেছে। এ জন্য তারা উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে একটি আইনও পাস করিয়েছেন। আর ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বলছেন কারো একক নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি। এরপর ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় সংসদ গঠনের পর থেকেই এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লোকজন। বিগত ৪ বছর ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন নিয়ে সরকারকে দেশি ও আন্তর্জাতিক মহলের কথা শুনতে হচ্ছে। এরই মধ্যে আদালতের রায়ে সংসদকে অকার্যকর বলায় চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সরকার।
এখন সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারদলীয় নেতাদের যত রাগ, ক্ষোভ ও অভিযোগ সবই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ওপর। কারণ, একটি রায়েই তিনি সরকারের সব কিছু উলটপালট করে দিয়েছেন।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম শনিবার বলেছেন, প্রধান বিচারপতি একজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী লোক। হঠাৎ করেই তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের সুরে কথা বলছেন। ৯৯ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় তিনি বিচারপতি হয়েছিলেন। এই প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ দুশ্চিন্তায় আছে।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুলের বক্তব্য নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সমালোচনার পাশাপাশি একটি অতিসত্য কথনের জন্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুলকে অনেকে ধন্যবাদও দিয়েছেন।
কারণ হলো, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী থাকাকালীন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা একজন আপাদমস্তক আওয়ামী ঘরানার আইনজীবী ছিলেন। ৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মুহূর্তে অনেক নিরপেক্ষ, মেধাবী ও সিনিয়র আইনজীবীদেরকে ডিঙ্গিয়ে সুরেন্দ্র কুমারকে বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিল। তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারপতি করা হয়েছিল সেটি দীর্ঘদিন পর হলেও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল আজ স্বীকার করেছেন।
এরপর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয়ের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন এই সুরেন্দ্র কুমার সিনহাই। এ রায়ের পরই সরকার তাকে আপিল বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি করে। এই সুরেন্দ্র কুমার সিনহাই সেদিন আওয়ামী লীগের প্রিয় পাত্র ছিলেন।
তারপর, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে যে স্কাইপি কেলেংকারি ফাঁস হয়েছিল সেখানেও বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। তিনি বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে বলেছেন, ৩ টাকে (মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) ঝুলিয়ে দেন। আপনাকে আপিল বিভাগে নিয়ে আসা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ভবিষ্যতে প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্যই সরকারের নির্দেশে এমনটা করেছিলেন। তখনো সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আওয়ামী লীগের কাছে একজন ন্যায় বিচারক ছিলেন।
সর্বশেষ জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর বিচারকার্য নিয়েও অনেক কথা বলেছেন। দুর্বল সাক্ষী থাকার পরও সরকারের নির্দেশে মীর কাসেম আলীর আপিল ও রিভিউ খারিজ করে দেন। তখনো তিনি আওয়ামী লীগের কাছে একজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিচারপতি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
কিন্তু, সর্বশেষ একটি রায় আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাওয়ার কারণেই সেই সুরেন্দ্র কুমার সিনহাই হয়ে গেলেন স্বাধীনতা বিরোধী। শান্তি কমিটির সদস্য। তাকে নিয়ে আজ অস্বস্তিতে দিন কাটছে সরকারের।
কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাই বলেছেন রায় অন্য কেউ লিখে দিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি কেবল পড়ে শুনিয়েছেন। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীও আজ বলেছেন- ‘রায় কে লিখে দিয়েছে জানি কিন্তু বলব না। সব কথা বলা যায় না।’ আওয়ামী লীগের নেতাদের এমন মন্তব্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি যুদ্ধাপরাধের দায়ে যেই রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে, তাদের রায়ও এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বা অন্য কেউ লিখে দিয়েছিলো?
Discussion about this post