অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে টাকা পাচার এক মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদেশে অর্থ পাচার অধিকহারে বেড়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অর্থ পাচারের দায় বিএনপির ওপরই চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার থেকে অর্থাৎ ২০০৯ সালের পর থেকে এখন যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে তা ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর এত অর্থ আর কখনো বিদেশে পাচার হয়নি। আর বিদেশে এই অর্থ পাচারের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই জড়িত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২ মে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)। সংস্থাটির দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে শুধু ২০১৪ সালে বিদেশে পাচার হয়েছে ৭৬ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা।
তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার হয়ে গেছে, তা চলতি অর্থবছরের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার সমান। তা ছাড়া এই অর্থ পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, কৃষি ও পানিসম্পদ খাতের মোট উন্নয়ন বাজেটের সমান।
এনিয়ে সারাদেশে তোলপাড়। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে চায়ের স্টল পর্যন্ত চলে আলোচনা-সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ। রাজনীতিতেও শুরু হয় কাদা ছোড়াছুড়ি। দেশের টাকা এভাবে বিদেশে পাচার হয়ে গেলে অর্থনীতি একেবারে পঙ্গু হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা এও বলছেন যে, বিএনপির লোকজন যদি এসব টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে সরকার তাদের ধরতে পারছে না কেন? আমদানি-রপ্তানি খাত এখন পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। সরকারের সঙ্গে আঁতাত না করে এ কাজ কেউ করতে পারবে না। সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকেরাই এই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত।
এনিয়ে আলোচনা-সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করলো সুইস ব্যাংক।
সুইস ব্যাংক তাদের রিপোর্টে বলছে, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশি নাগরিকদের জমানো টাকার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। শুধু এক বছরে তা বেড়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ কোটি ৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। এক বছরে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১০ শতাংশ। আর ২০১৬ সালে ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা বেড়ে মোট টাকা দাড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
এনিয়ে আবার নতুন সারাদেশে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। শেয়ারবাজার এবং ব্যাংক লুটের টাকাই সুইচ ব্যাংকে পাচার করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর বিএনপি-জামায়াত বলছে, সরকারের লোকজন বিগত দিনে শেয়ারবাজার ও ব্যাংক থেকে যে টাকা লুট করেছে তা সুইস ব্যাংকে জমা রেখেছে।
সুইস ব্যাংকে পাচার হওয়া বিশাল অংকের এই টাকা নিয়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেও এটাকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তার দৃষ্টিতে এটা যৎসামান্য টাকা। এমনকি এই টাকাকে তিনি পাচার বলতেও নারাজ।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, টাকা পাচারের বিষয়টি বাস্তবে মোটেই তেমন কিছু নয়। কিছু টাকা পাচার হয়, তা অতি সামান্য। এটা নজরে নেয়ার মতো নয়। এটা লেনদেন ও সম্পদের হিসাব। সাংবাদিকেরা অত্যন্ত অন্যায়ভাবে পাচার বলেছেন।
লুটপাট, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের এমন মন্তব্য নতুন নয়। এর আগেও সোনালী ব্যাংক থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে নেয়া ৪ হাজার কোটি টাকাকে তিনি বলেছিলেন এটা কিছুই না।
সংসদে দেয়া অর্থমন্ত্রী মুহিতের এ বক্তব্য নিয়ে এখন সর্বমহলে বইছে সমালোচনার ঝড়। দুর্নীতিবাজদের আড়াল করতেই অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।
কেউ কেউ বলছেন, পুরো দেশটা লুট হয়ে গেলেও তারা বলবে কিছুই হয়নি। এদেশের মানুষ ও দেশের সম্পদের প্রতি তাদের কোনো দরদ নেই। তারা ক্ষমতায় আসছেই জনগণের অর্থ লুট করার জন্য।
Discussion about this post