আওয়ামী ওলামা লীগ নামে কোনো সংগঠন আর থাকছে না। এ সংগঠনের কার্যক্রম বিলুপ্ত করে নতুন একটি ইসলামিক ফোরাম গঠনের কথা ভাবছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ওলামা লীগের কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আজ সোমবার ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভায় ওলামা লীগ বিলুপ্ত করে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে নতুন একটি সংগঠন দাঁড় করানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। ফলে আওয়ামী ওলামা লীগ আর থাকছে না সেটি প্রায় নিশ্চিত। তবে দলীয় নেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একাধিক ভাগে বিভক্ত ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতিম কোনো সংগঠন নয়। আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠন হিসেবে এটি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রী এমপিরাও বিভিন্ন সময়ে যোগ দেন। তবে ওলামা লীগ নিজেদের আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে প্রচার করলেও তাদের অনেক দাবিদাওয়া বিভিন্ন সময় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, ওলামা লীগের ব্যাপারে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই বিরক্ত। আজ কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সবাই ওলামা লীগের বিষয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানান। তারা নতুন করে ইসলামি ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি নতুন সংগঠন গঠনের পরামর্শ দেন।
এ সময় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ওলামা লীগের কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছেন। এরপরই নতুন সংগঠন দাঁড় করানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় অনেক নেতা ‘ইসলামিক ফোরাম’ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন আবার অনেকে এর বিরোধিতা করেছেন।
সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আইনজীবীদের একটি পৃথক ফোরাম করতে আমরা সমর্থ হয়েছি। আমার মনে হয় ইসলামিক একটি ফোরামও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সামনে রমজান মাস, তখন ইসলামিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান এই ফোরাম করতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গতানুগতিক ফোরাম দাঁড় করব না। আমাদের আদর্শ ধারণ করে এমন আলেম-ওলামা নিয়ে এই ‘প্ল্যাটফর্ম’ করা যেতে পারে।’
তবে ওবায়দুল কাদেরের এমন প্রস্তাবের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন দলটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এবং অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক টিপু মুন্সি।
তারা বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল, সেখানে এ ধরনের পৃথক ইসলামিক ফোরাম কতখানি যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার। তাছাড়া আমাদের ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের একটি পদ রয়েছে। এ পদের দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি ইসলামিক কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করতে পারেন।
এ সময় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ধর্মীয় নানা কার্যক্রমে আমরা জড়িত। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে যাচ্ছি।’
তবে ইসলামিক ফোরাম গঠন নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে না থাকলেও কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের কিছু কেন্দ্রীয় নেতার ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা আওয়ামী ওলামা লীগ নামে দুটি গ্রুপের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর একটি অংশের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দাবিদার যথাক্রমে মাওলানা মুহাম্মদ আখতার হোসাইন বুখারী ও মাওলানা মো: আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরি। অপর অংশের সভাপতি মাওলানা ইলিয়াস হোসাইন হেলালী ও সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন। সংগঠনটির উভয় পক্ষই ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে তাদের দলীয় কার্যালয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রচার করছে।
২০১৫ সালের অক্টোবরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ওলামা লীগের দুই অংশ মারামারিতে লিপ্ত হয়। এর আগের মাসে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ওলামা লীগের একাংশের সভাপতি ইলিয়াস বিন হেলালীকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এসব হামলার পেছনে সংগঠনের কোন্দলকেই দায়ী করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
নয়াদিগন্ত অবলম্বনে
Discussion about this post