অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বালিশ ও পর্দা কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার চামচ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে একটি চামচের দাম দেখানো হয়েছে ৯৭ হাজার টাকা। অথচ বাজারে চামচটির দাম মাত্র ৪০ টাকা। এ ছাড়া ৫০টি পর্দার দাম দেখানো হয়েছে এক লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এসব অপকর্মের সঙ্গে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় ঠিকাদার, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন ও উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান আহম্মদ জড়িত বলে জানা গেছে। সরকারি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন ঝিনাইদহ পৌর এলাকার পবহাটি গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন শিকদার বাঘা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিদর্শন বাংলোতে ক্রোকারিজ সামগ্রী কেনার জন্য ৯৭ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করা হয়। এরপর ২০২০ সালের ৮ জুন ওয়ার্ক মেমোরেন্ডামে ক্রোকারিজ সামগ্রী কেনা বাবদ ৯৭ হাজার টাকার ব্যয় দেখানো হয়। কুষ্টিয়ার চৌড়হাস মোড়ের নাসির উদ্দীন মোল্লাকে এই মালপত্র সরবরাহকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে মাত্র ৪০ টাকার চামচ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। পরিদর্শন বাংলোর বেয়ারার রফিকুল ইসলাম জানান, একটি ৪০ টাকার চামচ ছাড়া কোনো ক্রোকারিজ সামগ্রী পাননি তিনি।
২০১৯-২০ অর্থবছরে আরএফকিউর মাধ্যমে ৫০টি পর্দা কেনার ব্যয় দেখানো হয়েছে এক লাখ ৯৯ হাজার টাকা। অথচ বাজারে ২৪০ টাকা দরের ৫০টি পর্দার দাম পড়ে মাত্র ১২ হাজার টাকা। অফিসের দুই দফায় মবিল কেনার ব্যয় দেখানো হয়েছে চার লাখ টাকা। কিন্তু মিলেছে ৪০ টাকা দামের গ্রিজের প্যাকেট। ১০টি মেহগনির চারা রোপণ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে দুই লাখ টাকা। একটি ব্রান্ডিং বোর্ড তৈরি করতে খরচ দেখানো হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার টাকা। শৈলকূপায় ১১ কিলোমিটার খাল সংস্কার না করেই তুলে নেওয়া হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। এভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অফিস চত্বরে আবর্জনা পরিস্কার, অফিস ও ঘরবাড়ি মেরামত, বিলবোর্ড তৈরি, সেচ খাল পরিস্কার, গাছ রোপণ ও পরিদর্শন ব্যয় দেখিয়ে সরকারের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের যশোর সমন্বিত অফিসের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগে এসব উল্লেখ করেন ঝিনাইদহ পৌর এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন শিকদার বাঘা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে যশোর শহরে কোটি টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে আলিশান বাড়ি কিনেছেন। সাতক্ষীরায় শ্বশুরবাড়িতে পাঁচ বিঘা জমি কিনে সেখানে গরুর খামার করেছেন। শৈলকূপার ঠিকাদার গম মতিয়ারের সঙ্গে পার্টনারে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার কিনেছেন। দীর্ঘদিন ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করার সুবাদে সব সেক্টরে দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
অভিযোগকারী ঝিনাইদহ পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ঠিকাদার নিরঞ্জন সিকদার বাঘা বলেন, তিনি দুর্নীতিবাজ ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও সুলতান ও সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজনসহ জড়িতদের বিচার চেয়ে দুদক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এরা এত বড় দুর্নীতিবাজ যে, তিনটি বিল বোর্ড তৈরি করে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন (বর্তমানে মাগুরায় কর্মরত) বলেন, ঢালাও দুর্নীতির অভিযোগ সঠিক নয়। দেড়-দুই বছর আগে এসব মালপত্র কেনা হয়েছে। ক্রোকারিজের মধ্যে ১৮টি আইটেম ছিল। সেগুলো তুলে ধরা হয়নি। সব কাজ যথাযথভাবে করা হয়েছে। কোনো দুর্নীতি হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঝিনাইদহ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম জহুরুল হক বলেন, ‘দুর্নীতির যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তার কোনো প্রমাণ পাইনি। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। আমার দায়িত্ব পালনকালেও কোনো দুর্নীতি হবে না। আপনারা খোঁজখবর রাখবেন।’
সূত্র: সমকাল