অ্যানালািইসিস বিডি ডেস্ক
সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার প্রতিদিনই নতুন নতুন আইন করছে। সর্বশেষ রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি এখন থেকে সন্ধ্যা ৬ টার পর কেউ বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, করোনায় মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। করোনা এখন বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। বলা যায়-দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে গেছে।
দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই একদল লোক মসজিদে জামায়াত বন্ধের জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। সরকারের দালাল মিডিয়াগুলোও অপপ্রচার চালাতে থাকে যে, মসজিদ থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। তাই মসজিদে জামায়াত বন্ধ করতে হবে। ইসলামের বিধান থাকায় দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামও মসজিদে জামায়াতে নামাজ বন্ধের সিদ্ধান্তে একমত হন।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে সরকারের পক্ষ থেকে আদেশ জারি করা হয় যে, দেশের সকল মসজিদে ৫ জনের বেশি মুসল্লি নিয়ে জামায়াত পড়া যাবে না। আর শুক্রবারে সর্বোচ্চ ১০ জন মুসল্লি জামায়াতে অংশ নিতে পারবে। সরকারের এই নির্দেশ মেনেই এখন মসজিদগুলোতে জামায়াত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবারও প্রতিটি মসজিদে ১০ জন মুসল্লির অংশগ্রহণে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো-দেশের মসজিদগুলোতে তো জামায়াত সীমিত হলো। তারপরও করোনা সংক্রমণ এভাবে ছড়াচ্ছে কেন?
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেইন সড়কগুলো ফাঁকা থাকলেও মহল্লার অলি গলিতে মানুষে জমজমাট। মানুষ অহেতুক আড্ডা মারছে ও ঘোরাফেরা করছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি নিয়ে শুধু মহাসড়ক দিয়ে টহল দিচ্ছে।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন এলাকার গলির রাস্তার মাথায় বাঁশ দিয়ে লকডাউন করা হয়েছে। বাইরের কোনো মানুষকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি জরুরি প্রয়োজেন রিকশাও যেতে পারে না। কিন্তু দেখা গেছে, লকডাউনের নামে রাস্তার মাথায় বাঁশ দিয়ে আটকে দিয়ে গলির ভেতরে ঠিকই মানুষের আড্ডা চলছে। এমনকি শুক্রবার সন্ধ্যার পরও বিভিন্ন অলি গলিতে দলবেঁধে মানুষকে অহেতুক আড্ডা মারতে ও ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে। কিন্তু পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
আরেকটি ভয়ঙ্কর বিষয় হলো বাজার। বিভিন্ন এলাকার বাজারগুলোতে আগের চেয়ে এখন মানুষের ভিড় বেশি দেখা যায়।
সকাল বেলা বাজারে গেলে মনে হয় না যে, দেশে করোনা নামক কোনো মহামারী আছে। বাজারে মানুষ কোনো প্রকার নিয়ম শ্ঙ্খৃলা মানছে না। কিসের সামাজিক আর শারীরিক দূরত্ব? ঠেলাঠেলি আর ধাক্কাধাক্কি করেই মানুষ কেনাকাটা করছে।
সমাজের এসব চিত্র দেখে এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, শুধু মসজিদে জামায়াতে নামাজ বন্ধ করে কি লাভ হলো? বাজার আর রাস্তাঘাট মানুষের জন্য উম্মোক্ত করে দিয়ে শুধু মসজিদে জামায়াত বন্ধ করলে কি করোনা ঠেকানো যাবে? বন্ধ করলে সবই করতে হবে।
কেউ কেউ বলছেন, সরকারের লোকজন মসজিদেগুলোকে কঠোরভাবে নজরধারী করছে। ৫ জনের বেশি লোক জামায়াতে অংশ নিলে ইমামদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু অলি গলিতে মানুষের চলাচল বন্ধ করা হচ্ছে না কেন? বাজারের ভিড় কমাচ্ছে না কেন? বাজারে গেলেও এখন ভয় লাগে। সরকারের উচিত সবখানেই নজরধারী বাড়ানো। অন্যথায় করোনা ঠেকানো যাবে না।