অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সংক্রমণ বেড়ে দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ পর্যায়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে মৃত্যুর তালিকায়ও যোগ হয়েছে একজন। এছাড়া নতুন চার জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আক্রন্তের সংখ্যা দাড়ালো ১৪ জন। এতো কিছুর পরেও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত নয়। এমন সঠিক পরিকল্পনাও করতে পারেননি তারা। এনিয়ে দেখা গেছে জনমনে নানা প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি উদাসীনতা, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ধীরে ধীরে মহামারিতে ধারণ করছে এই ভাইরাস। তারা বলছেন, কোয়ারেন্টাইনে রাখা গেলে পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণে থাকতো। দ্রুত রোগ শনাক্ত আর আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। শুরুতেই ঘাটতি ছিল পরিকল্পনায়। প্রথমেই বিমান চলাচল ব্লক ডাউন করে অথবা আক্রান্ত দেশে ১৪ দিনের মধ্যে ভ্রমণ করেছে এমন ব্যক্তি আটকে দিয়ে করোনা প্রবেশ রোধ করা যেতো। কিন্তু সরকারি ভাবে তখন এমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে দেখা যায়নি।
দেখা গেছে, চীন থেকে ফেরত আসা এক মহিলার ফেসবুক লাইভ নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ উদ্ধৃত নিয়ে সমালোচনার জন্ম দেয়। কোনও চিকিৎসক না থাকায় ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর যাত্রীদের পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তারপরেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেই পাঁচ ঘণ্টা পর লিখে দেওয়া হয়ে তাঁদের পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় গাফিলতি, অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে কিছু যাত্রী পরীক্ষা ছাড়াই বেরিয়ে গেছেন। এরপর থেকেই সংসদে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায় করোনাভাইরাস। কিন্তু তারপরেও সরকারি উপর মহল থেকে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি কোনো কার্যকারি পদক্ষেপ। এমনকি হেলথ কেয়ার গুলোতে এখনো সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।
প্রথম থেকেই ক্ষমতাসীনরা করোনার ব্যাপারে উদাসীন। সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও এখনও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পরেনি সরকার। তাই এখনই ৫টি কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।তারা বলছেন, এখনই দেশে জরুরী অবস্থা জারি করা দরকার। এছাড়া দেশের পুরা বেসরকারি হেলথ সেক্টর, হাসপাতাল আর ফার্মাসিউটিকেলস অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয়করণ করে সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা। সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার। এছাড়া মেডিক্যাল ও প্যারামেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গড়ে তোলা। সবচেয়ে আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতার ব্যবস্থা করা। গার্মেন্টস গুলা বন্ধ করে সেখানে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য প্রটেক্টিভ স্যুট তৈরী করার প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
তারা বলছেন, খাদ্য ও অন্যান্য জরুরী পণ্যের মজুত ও বিপননে স্বচ্ছ ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। মজুতদারি-মুনাফাখোরি বন্ধ করা। এছাড়া কৃষিতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি দিয়ে এই মৌসুমে সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা। কৃষক যেন খোরাক রেখেও কয়েক কোটি মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা।
এদিকে ভয়াবহ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি খুবই দুর্বল বলে মন্তব্য করে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। এক লিখিত বক্তব্যে ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আবদুস সালাম বলেন, দুর্ভাগ্যবশত বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই ভয়াবহ ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সামান্য কিছু আশ্বাস ছাড়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হয়নি। এমনকি সরকারের দায়িত্বশীল কোনো মহল থেকেও সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কোনো প্রস্তুতি বা পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়নি।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারের দুর্বল প্রসত্মুতি নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, আমাদের স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর দিয়ে যারা দেশে প্রবেশ করছেন তাদের যথাযথ পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের গাফিলতি আছে বলে মনে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, সংবাদপত্র থেকে জানতে পেরেছি, মাত্র কয়েকদিন আগে বিমানবন্দরে বসানো স্ক্যানার মেশিনগুলো এখন আর কাজ করছে না। এ পরিস্থিতিতে দেশের বাইরে থেকে আগত ব্যক্তিদের পরীক্ষা কীভাবে করা হচ্ছে বা আদৌ কার্যকর কোনো পরীক্ষা হচ্ছে কিনা, তা আমাদের জানা নাই।
যেহেতু ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে, তা দিনে দিনে বাড়তে থাকবে। এটি মোকাবিলায় মূলত দুটি পথ আমাদের সামনে খোলা রয়েছে। তা হলো, আক্রান্ত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং দেশের অভ্যন্তরে এই ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ করা।
ডা. আবদুস সালাম বলেন, অতীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা আমাদের মনে আছে। সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে দেশব্যাপী ডেঙ্গুপীড়িত রোগীদের ভোগান্তি আর অসহায় আর্তনাদ আমাদের আগামী দিনের অনাহুত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্নতার মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে সীমিত সংখ্যক হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা হয়। আবার বিশেষ এই রোগটির যথাযথ চিকিৎসার জন্য ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তাছাড়া করোনা সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতনতার ক্ষেত্রেও সরকারের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ বা কর্মসূচি আমরা এখনো দেখিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপদ এখন আরও একধাপ বেড়েছে। তারা বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মেনে দ্রুত পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে দ্রুত আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করতে হবে। তৈরি রাখতে হবে বিশেষ মেডিকেল টিম। নিশ্চিত করতে হবে তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। আইইডিসিআর কেন্দ্রীক বলয় ভেঙে শুধু স্বাস্থ্য বিভাগই নয় সংযুক্ত করতে হবে সব মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও এনজিও গুলোকে।