অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব নেয়ার ৯ বছর এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারাবন্দী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রোববার নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে সংগঠনটির মহাসচিব ঘোষণা দিয়েছেন-সভা-সমাবেশের জন্য আর পুলিশের অনুমতি নেবো না। যখন খুশি রাস্তায় নামবো। তার এই বক্তব্যের জবাবে সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনুমতি ছাড়া মাঠে নামার শক্তি, সাহস ও সক্ষমতা বিএনপির নেই।
এদিকে, ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যকে মির্জা ফখরুলের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।অনুমতি ছাড়া মাঠে নামার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে কি বিএনপি মাঠে নামতে পারবে? এনিয়ে প্রশ্ন ও শংসয় প্রকাশ করছেন তারা। এছাড়া অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব কি পারবে ওবাইদুল কাদেরের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে?
২০১১ সালের ২০ মার্চ বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ার হোসেন মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করেন। ২০১১ সালেই আদালতের মাধ্যমে জনপ্রিয় কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকে কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহালসহ আরও বিভিন্ন দাবিতে মাঠে নামে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। সরকার পতনের লক্ষ্যে খালেদা জিয়া কর্মসূচি ঘোষণা দিলেও সেগুলো সফল হয়নি। দেখা গেছে, খালেদা জিয়া কর্মসূচি ঘোষণা দিলেও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নেতাকর্মীদের সেসময় মাঠে খুঁজে পাননি। এমনকি রাজনৈতিক কৌশলের নাম করে ফখরুল চলে যেতেন আত্মগোপনে। এনিয়ে দলের নেতাকর্মীরা তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করতেন।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল-২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ঘোষণা করেছিলেন খালেদা জিয়া। সেদিন গুলশানের কার্যালয়ে বালুর ট্রাক দিয়ে খালেদা জিয়াকে আটকে দিয়েছিল সরকার। কর্মসূচি সফল করাতো দূরের কথা, সেদিন দলীয় প্রধানকে মুক্ত করার জন্যও একটি মিছিল বের করতে পারেনি বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা কেউই সেদিন মাঠে নামেনি।
এরপর, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভুমিকা রাখতে পারেননি বিএনপির এই মহাসচিব। এমনকি নির্বাচন পরবর্তী যে আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল মির্জা ফখরুলদের পিছু টানের কারণেই খালেদা জিয়া আন্দোলন স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি টানা অবরোধ ঘোষণা দেয়ার পরই মির্জা ফখরুল রাজপথ ছেড়ে প্রেস ক্লাবে ঢুকেন। সেখান থেকে পুলিশ তাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে মির্জা ফখরুল মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু, পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হওয়ার পরও সরকার বিরোধী কোনো কর্মসূচি সফল করতে পারেননি তিনি।
কথিত দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে আজ পর্যন্ত শক্ত কোনো কর্মসূচি দিতে পারেননি তিনি। যে কয়টা শান্তি সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে সেগুলোও তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপের মুখে করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করার জন্য বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মুখিয়ে আছে। নেত্রীর জন্য এখন তারা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত আছেন। শুধু কেন্দ্রীয নেতাদের ডাকের অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে যে কারণে আটকে রাখা হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ মনগড়া এবং বানোয়াট। যে মামলায় উনার কোন সম্পৃক্ততা নেই, কোথাও উনার কোন স্বাক্ষর নেই, সেই মামলায় উনাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। শুধু আমাদের নেত্রী নয়, সারাদেশে আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। আসামি করে বাড়িছাড়া করে রেখেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য যে, গণতন্ত্রের প্রতীক দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি করা এবং স্বৈরশাসকের পতন ঘটানো।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও বলেছেন, ‘সরকারের অনুমতি বা পুলিশের অনুমতি নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন হয় না। আমাদের এখন মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে, আর কোনো অনুমতি নয়। আমাদের অধিকার আন্দোলনের আমাদের অধিকার সমাবেশের, আমাদের অধিকার মিছিলের, আমরা কার কাছে অনুমতি চাইব?’
এখন, প্রশ্ন হচ্ছে ওবায়দুল কাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে মির্জা ফখরুল কি অনুমতি ছাড়া মাঠে নামতে পারবেন? ক্ষমতাসীনদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা ডেঙ্গিয়ে বিএনপি কি পারবে রাজপথ দখলে নিতে?