জামায়াতে ইসলামীর আমির নির্বাচন সম্পর্কে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গতকাল একটি অসত্য রিপোর্ট প্রকাশের অভিযোগ করেছে জামায়াত। ‘নতুন আমির নিয়ে জামায়াতে নানা প্রশ্ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও জামায়াতকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি।
এ ব্যাপারে গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে জামায়াতের প্রধান নির্বাচন কমিশনা মাওলানা এ টি এম মাছুম বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং জামায়াতকে জনগণের সামনে হেয়প্রতিপন্ন করার হীনউদ্দেশে এ অসত্য রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি প্রতিবেদনটির নিন্দা জানান। জামায়াতের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
মাওলানা মাছুম বলেন, জামায়াত একটি ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক ইসলামী দল। এটি পরিচালিত হয় সংগঠনের গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে। গঠনতন্ত্রে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাকে অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভোট চাওয়া কিংবা প্রার্থী হিসেবে কাউকে উপস্থাপনেরও কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, বর্তমান আমির জনাব মকবুল আহমাদ ‘এখনও আমির আছেন’। বার্ধক্যজনিত কারণে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেয়ার জন্য তিনি সংগঠনের কাছে আবেদন পেশ করেন ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা কর্তৃক প্যানেল নির্ধারণের সময় তাকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে তার এই অনুরোধ গ্রহণ করেন এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যদের কাছে তার আবেদন পৌঁছানো হয়। মকবুল আহমাদকে কৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা কর্তৃক নির্বাচিত তিনজনের প্যানেলে ডা: শফিকুর রহমান ছয় ভোট বেশি পেয়ে এক নম্বরে থাকেন মর্মে প্রথম আলোর রিপোর্টে দেয়া এ তথ্য সঠিক নয় দাবি করে বিবৃতিতে মাওলানা মাছুম বলেন, পুরুষ এবং মহিলা রুকনদের ভোট এক ধরনের ব্যালটে গ্রহণ করা হয়েছে এবং পুরুষ ও মহিলা ভোট আলাদা করে গণনা করা হয়নি। তাই কে নারী ভোট বেশি পেল তা নির্বাচন কমিশনসহ অন্য কারোর জানার কোনোই সুযোগ নেই। এসব তথ্য প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের সম্পূর্ণ মনগড়া এবং মিথ্যা। এখানে স্বাধীনভাবে পূর্ণ আমানতদারির সাথে রুকনগণ আমিরে জামায়াত নির্বাচনে ভোট প্রদান করেছেন।
তিনি আরো বলেন, এত দ্রুততার সাথে কেন ফলাফল ঘোষণা করা হলো মর্মে যা বলা হয়েছে তা অযৌক্তিক। আমিরে জামায়াতের নির্বাচনের তফসিল ছিল ‘১৭ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে’। ভোটগ্রহণ শেষে প্রিজাইডিং অফিসার এবং তার সাহায্যকারী আরো দুই-তিনজনকে স্থানীয়ভাবে ভোট গণনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তারা ভোট গণনার রিপোর্ট লিখিতভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পাঠিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করেন এবং ১২ নভেম্বর সেই ফলাফল ঘোষণা করেন। সুতরাং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে কোনো তাড়াহুড়া করা হয়নি। এখানে তাড়াহুড়ার প্রশ্নই আসে না। নির্বাচনের সব প্রক্রিয়া নিয়মতান্ত্রিকভাবে গঠনতন্ত্র মোতাবেক যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
অতীতের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্বচ্ছতা এবং পূর্ণ আমানতদারির সাথেই আমির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ এবং ফলাফল ঘোষণা করা হয় বলে দাবি করে দলটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, কিছু দিনের মধ্যেই নতুন আমির শপথ গ্রহণ করবেন এবং দায়িত্বভার বুঝে নেবেন। তাই অযথা বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশে এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করা কারো কাম্য নয়।