অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আইন শৃংখলা বাহিনী বর্তমানে সম্পুর্ন একপেশে ভুমিকা পালন করছে এবং ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা গণহারে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করছে এবং বাক স্বাধীনতাকে নানাভাবে হরন করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
বাংলাদেশ প্রসংগে সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছেন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
পরিস্থিতির উন্নয়নে এইচআরডব্লিউ জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ ক্ষমতাধর সংস্থা ও দেশগুলোর প্রতি বাংলাদেশের শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির আহবান জানিয়েছে যাতে এই ধরনের দমন পীড়ন বন্ধ করা হয় এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়।
গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়টাতে বাংলাদেশে স্বেচ্ছাচারী গ্রেফতারের ঘটনা অনেক বেড়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকেও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারী দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী কার্যক্রমও ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে গণহারে হয়রানি করা এবং প্রশাসন আইনকে ইচ্ছামত ব্যবহার করতে শুরু করায় দেশজুড়ে একটি আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগ কিংবা নির্বাচন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে ভুমিকা পালন করতে পারছেনা। নির্বাচন ও মনোনয়ন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করতে গিয়েও আদালত ও নির্বাচন কমিশন রীতিমতো হিমশিম খেয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে যাতে তারা কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে পারে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে। চারিদিকে এখন ভয় ও আতংকের একটি পরিবেশ যা গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্য মোটেও উপযোগী নয়। কিন্তু সরকারের উচিত এই দমন পীড়ন বন্ধ করে মানুষকে স্বাধীনতা দেয়া যাতে তারা নিজেদের পছন্দমত সরকারকে বেছে নিতে পারে।
ইতোমধ্যেই নজরদারি, হুমকি-ধামকি, আটক, বিরোধী নেতাদেরকে রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে তাদেরকে হয়রানি করা এবং বিরোধী দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের হয়রানি করার অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি মিডিয়াগুলোর উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ৫৪টি মিডিয়া পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে। এমনভাবে আইন প্রনয়ন করা হয়েছে যাতে মানুষ মন খুলে কথা বলতে না পারে, মিটিং বা সমাবেশও করতে না পারে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির হিসাব মতে গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া গ্রেফতার অভিযানে নানা মামলায় তাদের ৩ লাখ লোককে আটক ও হয়রানি করা হয়েছে। একইভাবে আটক অভিযান চলছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধেও। জামায়াতের কাছে থাকা তথ্য মতে গত একমাসে তাদের ১৮৫৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএনপির সাধারন নেতাকর্মীই শুধু নয়, দলের উচ্চ পদস্থ নেতারাও ভয়াবহ মামলা-হামলার শিকার। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে আছে ৪৬টি মামলা। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আছে ৪২টি মামলা। বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম নীরবের বিরুদ্ধে আছে সর্বাধিক ২৬৭টি মামলা।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাথে আলাপকালে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, দেশে এখন যেভাবে ভয় দেখিয়ে মানুষের মুখকে বন্ধ রাখা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এর আগে সামরিক শাসনের আমলেও মানুষকে এতটা ভয়ের মধ্যে রাখা হয়নি যতটা এই সরকারের আমলে হয়েছে। নতুন এক আইন করা হয়েছে যার নাম দেয়া হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইনের আওতায় যে কোন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে ফেলে তাকে মারাত্মকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
একই সংগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নানাভাবে কড়াকড়ি ও বিধি নিষেধ আরোপের চেষ্টা চলছে। গুজব সৃষ্টি করা হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে সরকার বিরোধী মতের অনলাইন এক্টিভিস্টদের উপর নজর রাখছে। আইন শৃংখলা বাহিনীগুলোকেও এই ব্যপারে বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়ে রাখা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ