আপন দুই ভাই তারা। একজন ফারুক হোসেন (৫০), অন্যজন আজিজুল হক (৪৫)। বাবার নাম জেহের আলী। বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামে। একই দিনে দুই ভাই নিখোঁজ হন। গত রোববার তাদের লাশ উদ্ধার হয় যশোরেরই দুই উপজেলা থেকে। পুলিশ বলেছে, কারা এ হত্যা করেছে তা তারা জানে না; যে কারণে সবাই এটিকে বলছেন গুপ্তহত্যা। কেউই জানেন না; কারা ও কেন এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। এভাবেই একের পর এক ঘটছে গুপ্তহত্যার ঘটনা। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে এই গুপ্তহত্যার ঘটনায় উদ্বিগ্ন মানুষ। এমনকি রাজধানীর পাশের রূপগঞ্জে ট্রিপল খুনের ঘটনাও ঘটেছে।
গত রোববার শার্শা উপজেলার পশ্চিমকোটা গ্রামের একটি মেহগনি বাগান থেকে আজিজুলের এবং কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি-চিংড়া সড়কের ধর্মপুর গ্রামের রাস্তার পাশ থেকে ফারুকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের আরেক ভাই সাইদুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আজিজুল ও তার বড়ভাই ফারুক একসাথে বাজারের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ১০টা পর্যন্ত বাড়িতে না ফেরায় তারা খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে থানায় বিষয়টি জানান। এরপর রোববার ফোন পেয়ে শার্শা উপজেলার পশ্চিমকোটা গ্রামের একটি মেহগনি বাগানে গিয়ে আজিজুলের লাশ শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নেয়া হলে দুপুরে পরিবারের লোকজনও সেখানে যান। এর কিছু সময় পর কেশবপুর থেকে আনা অজ্ঞাত আরেকটি লাশ দেখে তারা সেটি ফারুকের বলে শনাক্ত করেন।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, নিহত আজিজুল ওরফে হাতকাটা আজিজুল একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সাত-আটটি মাদক মামলা রয়েছে। শার্শার বাগআঁচড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আবদুর রহিম হাওলাদার জানান, উপজেলার পশ্চিমকোটা গ্রামের একটি মেহগনি বাগানে আজিজুলের মাথায় গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ সকাল ৯টার দিকে লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। দুই দল মাদক কারবারির বিরোধের জেরে তিনি খুন হতে পারেন।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিন বলেন, নিহতের গলায় একটি দাগ রয়েছে।
নিহতদের ভাই সাইদুল অভিযোগ করেন, তার ভাই আজিজুল মাটি বিক্রির ব্যবসা করতেন। অনেক আগে বোমা বিস্ফোরণে তার দু’টি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফারুকও মাদক কারবারি ছিলেন না। পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
গত শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলো রাজধানীর মহাখালী এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে মো: সোহাগ (৩২), মুগদা এলাকার মো: আবদুল মান্নানের ছেলে শিমুল (৩১) ও ওই এলাকার আবদুল ওয়াহাব মিয়ার ছেলে নুর হোসেন বাবু (৩০)। এরা তিনজন একে অপরের বন্ধু ও ঝুট ব্যবসায়ী। শিমুল ও বাবু পরস্পর ভায়রা। তাদের স্বজনদের দাবি, গত বুধবার বেড়াতে যাওয়ার পথে দৌলতদিয়ায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন তাদেরকে যাত্রীবাহী বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন। ওই বাসের সুপারভাইজার তাদের ফোন করে অপহরণের বিষয়টি জানান। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে পূর্বাচল উপশহরের আলমপুর এলাকার ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় সড়কের পাশে লাশ তিনটি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ লাশ তিনটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। কে বা কারা এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে গতকাল পর্যন্ত কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ।
গতকাল বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ তীরে তেলঘাট এলাকায় গতকাল লাশটি ভেসে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের বয়স ৪০ বছর বলে পুলিশ জানায়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কেরানীগঞ্জের তরিকুল্লাহর ডকইয়ার্ড-সংলগ্ন বেড়িবাঁধ থেকে আরেক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, এগুলো গুপ্তহত্যার শিকার। কে বা কারা এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কেও পুলিশের কাছেও কোনো তথ্য নেই।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ২৭ জন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য গতকাল বলেছেন, তাদের আশঙ্কা তাদের স্বজনেরা গুপ্তহত্যার শিকার হতে পারেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত